আমরা সবাই তরঙ্গ সম্পর্কে অবগত আছি। তরঙ্গর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ঢেউ। অর্থাৎ আমরা যদি পানির মধ্যে একটা ঢিল ছুরি তাহলে দেখব যে সেখানে বিন্দু বিন্দু ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ চারিদিকে পানির ঢেউ গুলি ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরে যদি কোন আলোর প্রদীপ থাকে তাহলে ঘরে ছড়িয়ে পড়ে আলো সেটাও একটি তরঙ্গের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। আমরা যখন কথা বলি তখন একটি শব্দ যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে সেটা কেউ তরঙ্গই বলা হয়। তাই আমরা তরঙ্গ সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের উদাহরণ দেখতে পাই আমাদের আশেপাশের পরিবেশ থেকে।
একটা স্প্রিংকে সংকুচিত করে ছেড়ে দিলে আবার ভেতর দিয়ে যে বিচ্যুতি ছুটে যায় সেটা একটা তরঙ্গ। অর্থাৎ আমরা যখন নদীর মাছ দিয়ে কোন নৌকার যেতে দেখি এবং কিছুক্ষণ পর একটি জলের ঢেউ সেই নদীর বুকে আছড়ে পড়ে এগুলি আসলে তরঙ্গ বা ঢেউ নামে অভিহিত। আবার এক কথায় বলা যায় যে তরঙ্গ টিভি কি আমরা সেটা অনুভব করতে পারি কিন্তু যদি তার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একটা সুন্দর সংজ্ঞা দিতে চাই তাহলে বলতে হবে যে- তরঙ্গ হচ্ছে একটা মাধ্যমের ভেতর দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শক্তি পাঠানোর একটা প্রক্রিয়া, যেখানে মা মাধ্যমে কণাগুলো তার নিজ অবস্থানে স্পন্দিত হতে পারে কিন্তু সেখান থেকে সম্পূর্ণ সরে যাবে না।তরঙ্গ নিয়ে যদি আলোচনা করার সময় তার কয়েক ধরনের বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা বুঝতে পারি এখানে সেটি হচ্ছে তরঙ্গের বিশেষ করে যান্ত্রিক তরঙ্গের সব বৈশিষ্ট্য কিছু আলোচনা করব।
যান্ত্রিক তরঙ্গের জন্য মাধ্যমের দরকার হয়। পানিতে ঢেউ হয় একটা স্প্রিং এর তরঙ্গ পাঠানো যায় একটা দড়িতে তরঙ্গ সৃষ্টি করা যায় আমরা যে শব্দ শুনি সেটাও একটা তরঙ্গ এবং তার মাধ্যম হচ্ছে বাতাস। অর্থাৎ একটা মাধ্যমের ভেতর দিয়ে যখন তরঙ্গ যেতে থাকে তখন কণা গুলো নিজ অবস্থানে থেকে স্পন্দিত হয় কিন্তু কণাগুলো নিজে তরঙ্গের সাথে সাথে সরে যায় না। আবার তরঙ্গের ভেতর দিয়ে যদি শক্তি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে তখন শক্তি যত বেশি হয় তরঙ্গের বিস্তার তত বেশি হয়। শক্তি তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ বিস্তার যদি দ্বিগুণ হয় শক্তি হয় চার গুণ। সব তরঙ্গেই একটা বেগ থাকে সেই বেগ তার মাধ্যমে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
তরঙ্গের প্রতিফলন কিংবা প্রতিসরণ হয় । অর্থাৎ এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাবার সময় তরঙ্গের খানিকটা যদি প্রথম মাধ্যমিক ফিরে আসে সেটা হচ্ছে প্রতিফলন। তরঙ্গ যখন প্রথম মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় মাধ্যমে যায় সেটা হচ্ছে প্রতিসরণ। প্রসারণের দিক এবং তরঙ্গের বেগ একই দিকে হয়ে থাকে। এই ধরনের তরঙ্গের নাম অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। শব্দ হচ্ছে এই রকম অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের উদাহরণ। আমরা দড়ির উঠানামা দেখেছি অর্থাৎ দড়ির খেলা জরির নাচ ইত্যাদি দেখেছি। অর্থাৎ দড়ির ওঠা এবং নামা তরঙ্গের বেগের সাথে লম্বা হয়। এরকম তরঙ্গের নাম অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। পানির ঢেউ হচ্ছে একটি এর উদাহরণ। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে শব্দ তরঙ্গ তৈরি করতে তার একটি উচ্ছেদ দরকার পড়ে।
এবং শব্দকে পাঠানোর জন্য একটি মাধ্যমের দরকার হয়। আবার আমরা এটা জানি যে পুরুষের গলার স্বর মোটা এবং নারী এবং শিশুদের গলার স্বর তীক্ষ্ণ হয়। অর্থাৎ আমাদের গলায় ফুসফুসে বাতাস ঢোকার জন্য এবং বের হওয়ার জন্য রয়েছে wind Pipe. এবং শব্দ সৃষ্টি করার জন্য রয়েছে স্বরযন্ত্র। সেজন্য পুরুষেরা কম কম্পাঙ্কের শব্দ তৈরি করে মেয়েরা বেশী কম্পাঙ্ক শব্দ তৈরি করে। আমরা এতক্ষণ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মতামত পোষণ করলাম। তাহলে এখন দেখা যাক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কাকে বলে?
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য: পদার্থবিজ্ঞানে তরঙ্গ সঞ্চালনকারী কোনো কম্পনশীল কণার একটি পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন হতে যে সময় লাগে সেই সময়ে তরঙ্গ যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে।