সজীব উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের সাইটোপ্লাজমে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট দন্ডর আকারের অঙ্গানু গুলোকে মাইটোকন্ড্রিয়া বলে। প্রতিটি মাইটোকনডিয়াম দি স্তর পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এর বহিঃ পর্দাকে মিশ্রণ। কিন্তূ আন্ত পর্দাটি আঙ্গুলের মত অনেক ভাজ সৃষ্টি করে। জীবের যাবতীয় বিপাকীয় কাজের মূল শক্তির উৎস হল মাইটোকন্ড্রিয়া। এর জন্য মাইটোকন্ডিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বলা হয়। জারণ এবং বিজারণ প্রক্রিয়া জন্য এ শক্তিটি উৎপাদন করা হয়। মূলত মাইটোকন্ডিয়া আবিষ্কার নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। বিজ্ঞানী কলিকার মূলত ১৮৫০ সালে মাইট্রোকন্ডিয়া পর্যবেক্ষণ করেছিলেন করেছিলেন। আরেকটি মতে বিজ্ঞানী অল্ড ম্যান ১৮৮৬ সালে ইহা আবিষ্কার করেন।
আবার কারো কারো মতে ১৮৯৮ সালে মাইট্রোকন্ডিয়া আবিষ্কার করেন।যারা এন্ডোসিম্বায়োন্ট হিসেবে অন্য কোষের মধ্যে ঢুকে পরে এবং একসময় কোষেরই অংশ হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মাইটোকন্ড্রিয়া এসেছে প্রোটি ওব্যাক্টেরিয়া। এর জন্য বিজ্ঞানীরা অনেক প্রমাণ দাড় করিয়েছেন। এগুলো থেকে বুঝা যায় বুঝা যায় যে মাইটোকন্ড্রিয়া এবং প্লাস্টিড ব্যাক্টেরিয়া থেকে এসেছে। ব্যাকটেরিয়ার এর মেম্রনের সাথে এই অঙ্গানু গুলোর মেমব্রণের অনেক মিল রয়েছে। নতুন মাইট্রোকন্ডিয়া অথবা প্লাস্টিক যে প্রক্রিয়ায় আসে ব্যাকটিয়ার এর ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে যায়। এটা এক ধরনের অযৌন প্রজনন।
এরা যে ধরনের রাইবজোম ব্যবহার করে তার ব্যাকটেরিয়াতে রয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার বাইরে মেমব্রণের পোরিন নামে এক ধরনের ট্রান্সপোর্ট প্রোটিন পাওয়া যায়। যা মাইটোকন্ডিয়া ও প্লাস্টিডের বাইরের মেমব্রন রয়েছে। তবে সবচেয়ে আরেকটি বিষয় হলো সেটা হচ্ছে ডি এন এ। মাইটোকন্ড্রিয়া ও প্লাস্টিড উভয়েরই দুটি ডিএনএ রয়েছে। যা ব্যাকটেরিয়ার সাথে তুলনা করলে বিশাল একটি মিল পাওয়া যায়।
মাইটোকন্ড্রিয়া গঠন
মাইটোকন্ড্রিয়া টি দুই স্তর বিশিষ্ট আবরণ দিয়ে ঘেরা। এর বাহিরের স্তরকে বহিস্তর বলা হয় আর ভেতরের স্তরকে অন্তরস্থর বলা হয়। মাইটোকন্ডিয়া টি ভেতরের স্তরটি বিভিন্নভাবে ভাঁজ হয়ে ভেতরে চারিপাশে ঝুলে থাকে। একে ক্রিস্টি বলে। ক্রিস্টির গোলাকার বন যুক্ত কিছু ফোটা থাকে যাকে অক্সিজম বলে। মাইটোকন্ড্রিয়ার অন্তর স্থলের যে ভিতরে যে তরল পদার্থ থাকে তাকে ম্যাট্রিক্স তো বলে।
মাইটোকন্ড্রিয়া বাইরের দুটি অংশে ৬০A চওড়া একক একটি আবরণ থাকে।এই অংশে এক ধরনের তরল পুর্ন থাকে। অন্তঃ আবরণী দিয়ে পরিবেষ্টিত ভিতরের গহবরকে অন্তঃপ্রকোষ্ঠ বলে। মাইটোকন্ড্রিয়া ধাতরে প্রোটিন ও উৎসেচক অনেকগুলো ছোট ছোট অনু দেখা যায়।
মাইটোকন্ড্রিয়া কাজ
মাইটোকন্ড্রিয়া যে কাজ সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো
১. মাইটোকন্ড্রিয়া জীবের শ্বসন কার্যে সাহায্য করে। শ্বসন প্রক্রিয়ার ক্রেবস চক্রের প্রয়োজনীয় বিক্রিয়া পরিচালনা করে।
২. শ্বসনের ফলে নির্গত শক্তি থেকে এটিপি অনু সংগ্রহ করে।
৩. মাইটোকন্ডিয়ার মাধ্যমে শ্বনের ফলে খাদ্যের মধ্যন্ত শক্তি নির্গত হয় বলে এই মাইটোকনডিয়াকে কোষের শক্তি বলা হয়
৪. কোষের যাবতীয় কাজের শক্তি উৎপাদন এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা মাইটোকন্ড্রিয়া র কাজ।
৫. মাইটোকন্ডিয়া কোষের প্রয়োজনীয় শক্তি যুক্ত অনুর যোগান দেয়।
৬.ফ্যাটি এসিড বিপাকও নিয়ন্ত্রণ করে। শ্বসনের উপযোগী সকল উৎসেচক মাইট্রোকন্ডিয়ায় থাকে।
৭.মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বসনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম, কো-এনজাইম ধারন করে।
৮. স্নেহ জাতীয় খাদ্য তৈরি করতে সাহায্য করে মাইটোকনড্রিয়া।
৯. এবস চক্র সহ শোষণের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে গুলো মাইট্রোকন্ডিয়া সম্পন্ন করে।
মাইটোকন্ড্রিয়া কে পাওয়ার হাউস বলা হয় কেন?
মাইট্রোকনডিয়া কোষের শ্বসন অঙ্গানু। এই কোষটির মাধ্যমে শ্বসনের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়। আর এ শ্বনের মাধ্যমে জীবদেহের শক্তি উৎপাদন সম্পন্ন হয়।ক্রেবস চক্রসহ শ্বসনের গুরুত্বপূর্ন পর্যায়গুলো মাইটোকন্ড্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ জীবদেহে সকল জৈবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ও দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি মাইটোকন্ডিয়া থেকে পাওয়া যায় তাই একে পাওয়ার হাউস বা শক্তি ঘর বলা হয়।মাইটোকন্ড্রিয়া 60 থেকে 70 শতাংশ প্রোটিন 25 থেকে 32 শতাংশ লিপিড ও 0.5 শতাংশ আরএনএ দিয়ে তৈরি।
প্রায় 70 শতাংশ প্রোটিন উৎসেচক এর সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং 30% মাইটোকনড্রিয়ার দেহ গঠনে লাগে। এতে 2 থেকে 6 টি চক্রাকার দ্বিচক্রী ডিএনএ থাকে। মাইটোকন্ড্রিয়াতে রাইবোজোম ছড়ানো থাকে। খাদ্যের শক্তি নির্গত হয়ে মাইটোকন্ড্রিয়াতে সঞ্চিত থাকে। এবং ওই শক্তি কোষের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়।