সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর জীবজগতের জন্য একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক প্রক্রিয়া। কারণ এই সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে উৎপাদিত শক্তি গোটা জীবজগতের শক্তি হিসেবে বিবেচ্য হয়। আমরা এটা জানি যে উদ্ভিদ অভিস্রবণ পদ্ধতিতে পানি মাটি থেকে গ্রহণ করে। এই পানি জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে পাতায় ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, বৃক্ষের পাতায় সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয়। আর এই পাতাতেই হয় উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি। এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় মাটি থেকে আহরিত পানি বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং সূর্যালোককে কাজে লাগিয়ে এই প্রক্রিয়াটি সংগঠিত হতে থাকে যা জীবজগতের শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে বা শক্তি উৎপাদন করে থাকে।
কারণ প্রাণী জগৎ উদ্ভিদের এই শক্তি অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষণ এর মাধ্যমে উৎপাদিত শক্তি আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে পেয়ে থাকি। আবার এই তৃণভোজী প্রাণীদের খেয়ে মাংসাশী প্রাণীরা বেঁচে থাকে। অর্থাৎ পৃথিবীতে উৎপাদক পদার্থই হচ্ছে উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ সমস্ত জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছে। আলোর উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টে বায়ু থেকে গৃহীত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মাটি থেকে গৃহীত পানির সংমিশ্রণে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপন্ন করে এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায়। এই উৎপন্ন খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে চলে যায়। উদ্ভিদের প্রতিটি কোষি এই খাদ্য ব্যবহার করে শ্বসন প্রক্রিয়ায় তার বিভাগীয় কাজ চালানোর প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। উদ্ভিদের প্রতিটি কষিয়ে খাদ্য ব্যবহার করে থাকে তাই আমরা বলতে পারি উদ্ভিদের জন্য শুধু নয় সমগ্র প্রাণীজগতের জন্যই এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সালোকসংশ্লেষণ কাজের পর যতটুকু খাদ্য অবশিষ্ট থাকে সেগুলো উদ্ভিদের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলের সঞ্চিত থেকে যায়। বিভিন্ন ফল এবং বীজ ছাড়াও কান্ড মূল কিংবা পাতাতেও এই খাদ্য জমা থাকতে পারে। আমরা তাহলে এখন দেখতে পারি কালেকশন স্টেশনে উৎপন্ন খাদ্য কিভাবে উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়। উদ্ভিদের মূল এবং পাতা পরস্পর থেকে দূরে অবস্থান করায় খাদ্য চলাচলে একটি দ্রুত এবং কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা থাকা জরুরী বলে মনে করা হয়। এই কাজটি সিভনল করে থাকে। ফ্লয়েম পরিবহন কলাগুচ্ছের অন্যতম গুচ্ছ। আমরা জেনেছি যে পরিবহন কলা গুচ্ছ জাইলেম গুচ্ছ এবং গুচ্ছ থাকে। ফ্লোয়েমগুচ্ছে সিভনল, সঙ্গীকোষ প্যারেনকাইমা ও বাস্টফাইবার থাকে। তাই এভাবে বা এ সকল জিনিসের মধ্যে দিয়ে পাতায় উৎপাদিত সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে পড়ে।
এবং উদ্ভিদ ভালোভাবে বাঁচতে পারে। তাহলে উদ্ভিদের সেই কান্ড পাতা ফুল ফল ইত্যাদি খেয়ে আমরাও শরীরের খাদ্যের যোগান দিতে পারি বা দিয়ে থাকি। আর এই কারণেই সমগ্র প্রাণীজগৎকে উদ্ভিদ জগত বাঁচিয়ে রাখছে খাদ্যে সরবরাহ করে। অর্থাৎ গোটা প্রাণী জগতের সমস্ত খাদ্য সরবরাহ করে উদ্ভিদ জগত। তাই আমরা বলতে পারি যে প্রাণী জগতকে বাঁচিয়ে রাখতে বা তাদের বর্ধন হতে অবশ্যই উদ্ভিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একথা অন স্বীকার্য যে উদ্ভিদ না থাকলে কোন প্রাণী বাঁচতে পারবেনা। শুধু খাদ্যের জন্যই নয় অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর আদান-প্রদানের দিক থেকেও এই উদ্ভিদ এবং প্রাণী একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল। তাই আমরা উদ্ভিদ জগতকে বা উদ্ভিদ জগতের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি আমাদের জীবনে অতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকে আমাদের দেখাতে হবে সালোকসংশ্লেষণ কাকে বলে। তাহলে চলুন দেখি সালোকসংশ্লেষণ কি।
সালোকসংশ্লেষণ: তাহলে আমরা বলতে পারি সালোকসংশ্লেষণ হলো উদ্ভিদের পাতার সবুজ ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং পানির সমন্বয়ে বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ায় উৎপাদ হিসেবে উৎপাদিত হয়। সালোকসংশ্লেষণের বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ।
6CO2 + 12H2O আলো ক্লোরোফিল→ C6H1206 + 6H20 + 602
পাতার মেসোফিল টিস্যু সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় প্রধান স্থান। তাই আমরা বলতে পারি সালোকসংশ্লেষণ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যালোক এবং জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা জানি সমস্ত শক্তির উৎসই হলো সূর্য। আর এই সূর্যর শক্তিই সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের গোটা রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া দ্বারা।