অনিশ্চিত কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নীতি ও পদ্ধতি প্রণয়ন কিংবা কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংখ্যা ভিত্তিক গবেষণায় হচ্ছে পরিসংখ্যানের মূল প্রতিপাদ্য। কোন শহরে অধিবাসীদের বয়স বা আয় কোন স্থানের দৈনিক সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দৈনিক আয় ইত্যাদি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করাই হলো উপাত্ত। পরিসংখ্যানে দুই ধরনের উপাত্ত থাকে একটি বিন্যস্ত উপাত্ত আরেকটি অবিন্যস্ত উপাত্ত। সাধারণত এলোমেলোভাবে সংগৃহীত উপাত্তকে পরিসংখ্যানে অবিন্যস্ত উপাত্ত বলা হয়ে থাকে। আবার শ্রেণীবিন্যাসের সাহায্যে প্রাপ্ত উপাত্তকে পরিসংখ্যানে বিন্যস্ত উপাত্ত বলে।
পরিসংখ্যানের অংক করতে হলে আমাদের উপাত্ত গুলোকে কোন সারণিতে সাজিয়ে নিতে হয়। সেই কারণে এখানে শ্রেণীব্যাপ্তির প্রয়োজন হয়। যেকোনো শ্রেণীর ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্ন সীমার ব্যবধান হলো ওই শ্রেণীর শ্রেণীব্যাপ্তি বলা হয়ে থাকে। কোন উপাত্ত গুলোর মধ্যে কোন একটির মান যতবার উপস্থিত থাকে তাকে পরিসংখ্যানে ঘটনসংখ্যা বলা হয়ে থাকে। যেমন ২৩,২৫,২৭,২৩ ,২৭, ২৩, ২৩, সংখ্যাগুলোতে ২৩ এর ঘটন সংখ্যা ৪ ও ২৫ এর ঘটন সংখ্যা ১ এবং ২৭ এর ঘটনসংখ্যা ২। পরিসংখ্যান অংকের আরেকটি জিনিস প্রয়োজন সেটি হচ্ছে মধ্যক নির্ণয়। প্রদত্ত উপাত্তগুলোকে মানের উর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজালে যে মান উপাত্ত গুলোকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে তাকে, উপাত্ত গুলোর মধ্যক বা মধ্যমা বলা হয়ে থাকে। পরিসংখ্যানের আরেকটি বিষয় সেটি হল প্রচুরক। প্রদত্ত উপাত্তের মধ্যে যে সংখ্যাটি সর্বাধিক বার ব্যবহৃত হয় সেটিকেই প্রচুরক বলে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পরিসংখ্যানের অবদানের ফলেই পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি বিশ্বগ্রামে। তাই পরিসংখ্যানের দ্রুত সঞ্চালন ও বিস্তারের জন্য সম্ভব হয়েছে বিশ্বায়নের। এ বিশ্বায়নের যুগে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং বিশ্বায়নের অংশগ্রহণে অবদান রাখতে হলে আমাদেরও পরিসংখ্যান বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পরিসংখ্যান বিষয়ে ভালো জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই বলে আমাদের অবশ্যই পরিসংখ্যান অধ্যয়ন করতে হবে। পরিসংখ্যানে গুণবাচক নয় এমন সংখ্যা সূচক তথ্যাবলী পরিসংখ্যানের উপাত্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। আর এই অনুসন্ধানাধীন উপাত্ত পরিসংখ্যানে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এগুলো অবিন্যস্ত ভাবে থাকে এবং অবিন্যস্ত উপাত্ত থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তে আসা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণেই প্রয়োজন হয় উপাত্ত গুলোকে বিন্যস্ত এবং সারণি ভুক্ত করে নেওয়ার। আমাদের পরিসংখ্যানে আরেকটি জিনিস করতে হয় সেটি হচ্ছে উপাত্তের লেখচিত্র অংকন।
লেখচিত্র অঙ্কন করতে হলে গণসংখ্যা নিবেশন সারণীভুক্ত বা ক্রমযোজিত গণসংখ্যার সারণি ভুক্ত করা হলে এদের সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। এই সারণীভক্ত উপাত্ত সমূহ যদি লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় তবে তা বোঝার জন্য যেমন আরো সহজ হয় তেমনি দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এজন্যই পরিসংখ্যানে উপাত্ত সমূহ আমরা সারণীভূক্ত করে নিব এবং লেখচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন বহুল প্রচলিত ও ব্যাপক ব্যবহৃত পদ্ধতি অনুসরণ করব। পরিসংখ্যান থেকে গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে হলে আমাদেরকে উপাত্ত সমূহের মানের সমষ্টিকে যদি তার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হয় তবে উপাত্তসমূহের গড় মান পাওয়া যায়। তবে উপাত্তসমূহের সংখ্যা যদি খুব বেশি হয় তাহলে এই পদ্ধতিতে গড় নির্ণয় করা সময় সাপেক্ষ বেশ কঠিন ও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই কারণে এই সকল ক্ষেত্রে উপাত্ত সমূহ শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে সারনিবদ্ধ করে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে আমাদের গড় নির্ণয় করতে হয়। আমাদের মূল বিষয় ছিল পরিসংখ্যান কাকে বলে? তাহলে চলুন দেখি পরিসংখ্যান কাকে বলে
পরিসংখ্যান: পরিসংখ্যান বলতে কোন ঘটনা বা বিষয়ের সংখ্যাত পরিমাপ অর্থাৎ তথ্য বুঝায়। কোন কোন পরিসংখ্যানবিদ একে সংখ্যাত্মক তথ্য, আবার কেউ কেউ একে সংখ্যা নিয়ে গবেষণা বিজ্ঞান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। পরিসংখ্যান হচ্ছে তথ্য বিষয়ক বিজ্ঞান। যেমন-জনসংখ্যা বিষয়ক জন্ম মৃত্যু, দ্রব্যমূল্য, মজুরি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সংখ্যাত্মক তথ্য দ্বারা এদের পরিসংখ্যান বোঝানো হয়।