হাদিস কাকে বলে

আমরা জানি ইসলামিক শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হলো সুন্নাহ। সুন্নাহ অর্থ হলো রীতিনীতি অর্থাৎ ইসলামিক রীতিনীতি কে বোঝায়। তাই ইসলামী পরিভাষায় মহানবী (স.) এর বাণী কর্ম ও তার সমর্থিত রীতিনীতিকে সুন্নাহ বলা হয়ে থাকে। তবে শরীয়তের এই সুন্নাহকে আবার হাদিস নামেও অভিহিত করা হয়। এবং সুন্নাহ হল আল কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ মনে করা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বিভিন্ন বিষয়ের সংক্ষিপ্ত মূলনীতি বর্ণনা দিয়েছেন। আর মহানবী তার মাধ্যমে এসব বিধি-বিধান ও বিষয় সমূহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। আল্লাহতালা বলেন যে-আর আমি আপনার প্রতি কোরআন নাজিল করেছি মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে। হাদিস অর্থ কথা বা বাণী। ইসলামী পরিভাষায় হাদিস বলতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ এর বাণী কর্ম ও মৌন সম্মতি কে বোঝানো হয়েছে।

সাধারণত হাদিসের দুইটি অংশ থাকে একটি সনদ এবং অপরটি মতন। অর্থাৎ হাদিসের রাবি পরম্পরাকে সনদ বলা হয়ে থাকে। যিনি হাদিস বর্ণনা করেন তাকে বলা হয় রাবী বা বর্ণনাকারী। হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে হাদিসের রাবিগণের পর্যায়ক্রমিক উল্লেখ বা বর্ণনা পরম্পরায় সনদ বলে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ হাদিসের মূল বক্তব্য বা মূল অংশকে বলা হয় মতন। তাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হাদিস শাস্ত্রে সনদ ও মতন উপায়টিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। আমরা জানি যে নতুন বা হাদিসের মূল বক্তব্য এর উপর ভিত্তি করেই হাদিসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় এবং সেই ভাগগুলি হল কাবলি ফিলি এবং তাকরিরি।

তাহলে এখন আমরা কাওলি হাদিস কাকে বলে বা কাউলি হাদীস কি সে সম্পর্কে কিছু ধারনা নিই। রাসূলুল্লাহ এর বাণী সূচক হাদিসকে কাওলী হাদিস বলা হয়। অর্থাৎ কালি হাদিস সম্পর্কে এ কথা বলা যায় যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ এর মুখনিঃসৃত বাণী। এরপর আসা যাক ফি’লি হাদিস সম্পর্কে। ফি’লি শব্দের অর্থ হল কাজ সম্বন্ধীয়। অর্থাৎ যে হাদিসে মহানবী এর কোন কাজের বিবরণ স্থান পেয়েছে তাকেই ফি’লি বা কর্মসূচক হাদিস বলা হয়।

তাকরিরি হাদিস: তাকরিরি অর্থ মৌন সম্মতি জ্ঞাপক। রাসুলুল্লাহ (স.) এর অনুমোদন সূচক হাদিস হলো তাকরিরি হাদিস। অর্থাৎ সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ এর সামনে কোন কথা বলেছেন কিংবা কোন কাজ করেছেন কিন্তু রাসুলুল্লাহ তা নিজে করেননি এবং তাতে বাধাও তিনি দেননি বরং মৌলতা অবলম্বন করে তাদের সম্মতি বা অনুমোদন দিয়েছেন বলে মনে করা হয়। আর এরূপ অবস্থা বা বিষয়ে এর বর্ণনা যে হাদিসে এসেছে সেই হাদিসকে তাকরিরি দেওয়া সম্মতি সূচক হাদিস বলা হয়ে থাকে।

সনদ বা রাবির পরম্পরার দিক থেকে হাদিস আবার তিন প্রকারের হয়ে থাকে যথা মাশুক মাউকুফ এবং মাকতু।
মারুফু হাদিস: যে হাদিসের সনদ রাসূলুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফু হাদিস বলা হয়।

মাওকুফ হাদিস: যে হাদিসের সনদ সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছে শেষ হয়ে গেছে রাসূলুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছায়নি এরূপ হাদিস কে মাউকুফ হাদিস বলে।
মাকতু হাদিস: যে হাদিসের সনদ তাবীঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মাকতু হাদীস বলে। অন্য কথায় বলা যায় যে হাদীসে কোন তাবির বাণী কাজ ও মন সম্মতি বর্ণিত হয়েছে তাকে মাকতু হাদীস বলা হয়। হাদিসের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকার হলো হাদিসে কুদসি। কুদসি শব্দের অর্থ হলো পবিত্র। এই প্রকার হাদিস সরাসরি আল্লাহতালার সাথে সম্পৃক্ত। তাই ইসলামী পরিভাষায় যে হাদিসের শব্দ ও ভাষা, রাসুলুল্লাহ এর নিজস্ব কিন্তু তার অর্থ ভাব ও মূল কথা আল্লাহতালার নিকট থেকে ইলহাম বা স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত তাকে হাদিসের কুদসি বলে।

সাহাবীগণ মহানবী এর বাণী সমূহ মুখস্ত রাখতেন। রাসূলুল্লাহ কোন সময় কি কাজ করতেন তা খেয়াল রাখতেন। আরবদের স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ। তারা একবার যা স্মৃতিতে ধারণ করতেন কখনোই তা ভুলতেন না। এছাড়াও লিখিত আকারেও সে সময় বেশ কিছু হাদিস সংরক্ষিত হয় তবে বহু সাহাবী রাসূলুল্লাহ এর অনুমতিক্রমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাদীস লিখে রাখতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *