সমাজ কাকে বলে

সমাজের ধারণা সেই প্রাচীন গুহাবাসী মানব থেকে শুরু হয়েছে। প্রাচীন মানব বনে জঙ্গলে বসবাস করত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈরিতা এবং হিংস্র জন্তু-জানোয়ারদের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা আস্তে আস্তে ছোট ছোট দলে একসঙ্গে বাস করা শুরু করল। মূলত এখান থেকেই মানুষ সামাজিক জীব হয়ে উঠেছে। তাহলে আমরা বলতে পারি মানুষ যখন সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই, তখন থেকে সমাজের উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমানে এই সমাজ আরো আধুনিক হয়েছে এবং গোটা পৃথিবী এখন সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করে। অর্থাৎ এই বিশ্বায়নের যুগে গোটা বিশ্ব একটি সমাজ বা গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের কোথাও যে কোন ঘটনা ঘটলে তা সারা বিশ্বব্যাপী হতে আর সময়ের প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ সেই ঘটনাটি নিমিষেই গোটা বিশ্বব্যাপী হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সারা পৃথিবী জুড়ে। সামাজিক কারণ মানুষের জীবনব্যাপী একটি চলমান প্রক্রিয়া। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজ জীবন কাঙ্ক্ষিত আচরণ সহযোগী হয়ে গড়ে ওঠে।

এই প্রক্রিয়া সমাজের নিয়ম নীতি মূল্যবোধ বিশ্বাস আদর্শ ইত্যাদি আয়ত্ত করে ব্যাক্তি যেমন নিজের উন্নয়ন ঘটায় তেমনি সমাজে উন্নয়নেই অংশগ্রহণ করে। একজন ব্যক্তির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য অবশ্যই সমাজের প্রয়োজন আছে। যেহেতু মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না তাই মানুষকে শ্রেষ্ঠ সামাজিক জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে পৃথিবীতে সামাজিকীকরণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এই প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে হল পরিবার স্থানীয় সমাজ স্থানীয় সমাজের বিভিন্ন উপাদান সমবয়সী সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠানগুলি সবই মানুষকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের প্রেরণা যোগায় এবং সুখে-দুখে একে অপরের সাথী হওয়ার চেষ্টা করে।

তাই বর্তমান এই অত্যাধুনিক যুগে এসেও মানুষের কাছে সমাজের মূল্য অপরিসীম। এখনো একজন ব্যক্তি সমাজ ছাড়া বসবাস করতে গেলে সে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ মানুষকে একাকিত্বে গিলে ফেলে। এই একাকীত্ব কাটানোর জন্য মানুষ সবসময় যে কোন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হয় যে কোন সমাজের সঙ্গে তাকে চলতে হয়। এই আধুনিক যুগে এসেও মানুষ সমাজ ছাড়া আসলে একা একা চলা কঠিন হয়ে পড়ে। একজন শিশুর জন্মের কিছুদিন পরই অর্থাৎ ২-১ বছর পরেই তার কিছু সমবয়সী বন্ধু বা সঙ্গীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার বিকাশের জন্য। যখন সে স্কুলে যাবে তখন অবশ্যই তার একটি আলাদা খেলার সঙ্গী বা সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। এভাবে খেলার সাথীরা একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে।

কথাবার্তা আচার-আচরণ ও চালচলনের ক্ষেত্রে তারা একে অন্যকে প্রভাবিত করে।এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা সহযোগিতা সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী ও প্রকাশ পায়। একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পর তার পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা সহযোগিতা সহনশীলতা ইত্যাদি শিখতে শুরু করে। অর্থাৎ পরিবারের বসবাস করতে গিয়ে শিশু পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাদের আবেগ অনুভূতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগিয়ে তুলে খাদ্যাভ্যাস পোশাক পরিচ্ছদ ধর্মচর্চা শিক্ষা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা পরিবার থেকে গ্রহণ করে। এজন্য পরিবার তাদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে। আজকে আমাদের দেখাতে হবে সমাজ কাকে বলে।

তাহলে চলুন দেখা যাক সমাজ কাকে বলে?
সমাজ: সমাজ বলতে বোঝায় যখন একদল লোক একইসঙ্গে বসবাস করে একই সংস্কৃতি মেনে চলে তখন তাদেরকে সমাজ বদ্ধ জীব বা সামাজিক এক কথায় সমাজ বলা হয়ে থাকে। আরো ভালোভাবে বলা যেতে পারে তা হচ্ছে পরস্পর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীকে আমরা সমাজ বলতে পারি। সমাজ হল আমাদের চারপাশের মানুষজন যারা আমাদের সুখে-দুখে এগিয়ে আসে এবং আমরা একইসঙ্গে দুঃখ এবং আনন্দ ভাগ করে নেই, তারাই হচ্ছে সমাজ। সমাজের বিস্তৃতি বহু দূরে অর্থাৎ এক কথায় সমাজের কথা বলে শেষ করা যায় না। মানুষের রন্ধে রন্ধে সমাজ রয়েছে অর্থাৎ মানুষ সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত যাদের সঙ্গে যে ধরনের কাজ করে তা অবশ্যই সমাজের অন্তর্ভুক্ত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *