পরিমাপ কাকে বলে

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার ভোগ্যপণ্য বা অন্যান্য দ্রব্যের আকার আকৃতি ও ধরনের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন পদ্ধতির পরিমাপ করতে হয়। অর্থাৎ প্রাচীনকাল থেকেই যেমন গণনা বা সংখ্যা তাদের অজান্তেই এক সময় তৈরি হয়ে গেছিল তেমনি ভাবে পরিমাপের বিষয়টা ওইভাবেই আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে চলে আসছে। তবে প্রাচীনকালের পরিমাপের সাথে বর্তমানে পরিমাপের কিছুটা মিল এবং অমিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাই আমরা একথা বলতে পারি যে পরিমাপ শুধু আধুনিককালে একদিনে সৃষ্টি হয়নি। এটি বহু প্রাচীনকাল থেকেই জীবনের প্রয়োজনেই চলে এসেছে। আমরা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন বস্তু উপাদান পরিমাপ করে থাকি। আর বর্তমানে এখন পরিমাপ ছাড়া আর কোন কিছুই চলে না।

অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিমাপ করেই চলতে হয়। অর্থাৎ কখন ঘুম থেকে উঠবো তারও একটা সময় জ্ঞান বা পরিমাপের বিষয় আছে। কতক্ষণ পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজের সময় এগুলি আমাদের পরিমাপ করে নির্ধারণ করে নিতে হয় কাজটি করার পূর্বেই। তাই দেখা যায় যে পরিমাপ আমাদের জীবনের সঙ্গে বর্তমানে অঙ্গাভঙ্গি ভাবে জড়িত। বর্তমানে আমরা দৈর্ঘ্য মাপার জন্য ওজন পরিমাপ করার জন্য ও তরল পদার্থের আয়তন বের করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। ক্ষেত্রফল ও ঘনফল নির্ণয়ের জন্য দৈর্ঘ্য পরিমাপ দ্বারা তৈরি পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় আমাদের দেশে। আবার যদি জনসংখ্যার পরিমাপ করতে হয় তার জন্য আছে আলাদা পদ্ধতি। অর্থাৎ জনসংখ্যা পশু-পাখি গাছপালা নদীনালা ঘরবাড়ি যানবাহন ইত্যাদির সংখ্যাও আমাদের জানার প্রয়োজন হয়।

আর ইত্যাদি গণনা করে আমাদের এগুলোকে পরিমাপ করে নিতে হয়। বর্তমানে আমাদের যে কোন গণনায় বা পরিমাপের জন্য একক প্রয়োজন হয়। গণনার জন্য একক হচ্ছে প্রথম স্বাভাবিক সংখ্যা। আমরা ওজন পরিমাপ করার জন্য বর্তমানে মেট্রিক পদ্ধতির একক সমূহ ব্যবহার করে থাকি। এই একক সমূহ হলো মিলিগ্রাম সেন্টিগ্রাম বেসিক গ্রাম-গ্রাম ডেকা গ্রাম হেক্টর গ্রাম কিলোগ্রাম কুইন্টাল মেট্রিক টন ইত্যাদি। আমাদের সমাজে বর্তমানে দুই ধরনের পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। একটি হল দেশীয় পদ্ধতি এবং অপরটি আন্তর্জাতিক পরিমাপ পদ্ধতি বা ব্রিটিশ পরিমাপ পদ্ধতি। বিভিন্ন দেশে পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল একসময়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার হয়েই চলেছে।

আর এই কারণে আন্তর্জাতিকভাবে একটি পরিমাপ পদ্ধতি চালু করা ছিল বিশ্ব নেতৃত্ববৃন্দের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। এবং সেই চ্যালেঞ্জ থেকেই প্রথমে একটি আন্তর্জাতিক পরিমাপ পদ্ধতি চালু করার জন্য বিশ্ববাসী উঠে পড়ে লাগে। এবং তারই ধারাবাহিকতায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে প্রথম মেট্রিক পদ্ধতি নামের একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে সেই ম্যাট্রিক পদ্ধতি পুরো পৃথিবীতে প্রচলিত হয়। এই যে দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক মিটার এটি সেই ম্যাট্রিক পদ্ধতিরই একক। পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসেত দ্রাঘিমারেখা বরাবর বিষুব রেখা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের এক কোটি ভাগের এক ভাগ্যে এক মিটার হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্যারিস মিউজিয়ামে রক্ষিত এক খণ্ড প্লাটিনাম ও ইরিডিয়ামের তৈরি রড এই দৈর্ঘ্য 1 মিটার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

সকল দেশে বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে একই পরিমাপ প্রচলিত করতে হবে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ১৯৮২ সালের পহেলা জুলাই সরকারি ভাবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় যে আমাদের দেশেও মেট্রিক পদ্ধতি প্রচলন করতে হবে। এবং এর পূর্বে অবশ্য আমাদের বাংলাদেশেও আমাদের দেশীয় রীতি গুলি বা দেশেও রীতিতে পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এই দেশীয় রীতিতে পরিমাপ পদ্ধতি ছিল গন্ডা হাত বিগত তোলা সের ছটাক ইত্যাদি। আমরা এতক্ষণ পরিমাপ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে হাজির করলাম। তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে পরিমাপ কাকে বলে। তারপরেও দেখা যাক পরিমাপের সংজ্ঞা কি?

পরিমাপ: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ মাপ-জোখের বিষয়টাকে বলা হয় পরিমাপ। সুতরাং, কোন কিছুর পরিমাণ নির্ণয় করাকে পরিমাপ বলা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *