আজ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রায় চার লক্ষ এবং প্রাণীর প্রায় 13 লক্ষ প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এত বিপুলসংখ্যক উদ্ভিদ এবং প্রাণীর নাম দেওয়াটা একটা পদ্ধতিতে না হলে অনেক সমস্যায় পড়তো বিজ্ঞানীরা। এবং কোন প্রাণীর বা উদ্ভিদের একেক অঞ্চলের নাম এক এক রকম হওয়ার কারণে তাদের পরিচিতির বিষয়টিও গোটা পৃথিবীতে বা সারা বিশ্বে আলাদা আলাদা হয়ে থাকতো। সারা পৃথিবীতে একটি প্রাণীর একই নাম হলে সেই প্রাণীটিকে চিনতে জানতে বা তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত হতে সুবিধা হওয়ার বিষয়টি যখন থেকে বিজ্ঞানীদের মাথায় আসে তখন থেকেই একটি নামকরণের পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী কাজ করতে থাকে।
তবে আমরা যে সংখ্যাটি বললাম সেটি বর্তমানে দেওয়া হয়েছে এমন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংখ্যার কথা বলা হয়েছে আগামীতে বা অদূর ভবিষ্যতে আরো প্রাণী বা উদ্ভিদের নামকরণ করা হবে না বা বিকৃত হবেনা এমন নয় এটি এক কোটিও হতে পারে। তাই এই বিপুলসংখ্যক উদ্ভিদের জন্য অবশ্যই একটা নামকরণ পদ্ধতির অবলম্বন করা উচিত বলে সকল বিজ্ঞানীরা মনে করেন।
তাই এ কথা বলা যেতেই পারে যে জানা বোঝা এবং শেখার সুবিধার জন্য এই অসংখ্য জীবকে সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস করা বা সাজানোর অবশ্যই প্রয়োজন আছে। জীবজগৎকে একটি স্বাভাবিক নিয়মে শ্রেণীবিন্যাস করার প্রয়োজনীতা অবশ্য অনেক আগের থেকেই প্রকৃতিবিদগণ অনুভব করেছিলেন। সেই প্রয়োজনের তাগিদেই জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে, যার নাম আমরা ট্যাক্সোনমি বা শ্রেণীবিন্যাস বিদ্যা বলে থাকি। শ্রেণীবিন্যাসের লক্ষ্য মূলত একটাই আর সেটি হচ্ছে এই বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় জীবজগৎ কে সহজ ভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে একজন শিক্ষার্থী বা বিজ্ঞানী বা যে কোন মানুষের জন্য বোঝা বা সঠিকভাবে জানা। এই শ্রেণিবিন্যাসে এর জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানী কাজ করে গেছেন। বর্তমান শ্রেণীবিন্যাস অবশ্যই কোন একক বিজ্ঞানী বা একজন বিজ্ঞানী দ্বারা সম্ভব হয়নি।
প্রথমে শ্রেণীবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন সুইটিস প্রকৃতির ক্যারোলাছ লিনিয়াস। তিনি 1735 সালে পাঠশালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রী লাভের পর তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমের অধ্যাপক এ নিযুক্ত হয়েছিলেন। এবং তিনি সেখান থেকেই বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ বিশেষ করে ফুল সংগ্রহ করে জীবের শ্রেণীবিন্যাসে তার অনেক আগ্রহ ছিল বলেই তিনি এ কাজ করতে পেরেছেন।তিনি প্রথম জীবের পূর্ণ শ্রেনী বিন্যাসের এবং নামকরণের ভিত্তি প্রবর্তন করেছিলেন বলে সকলে মনে করেন। অসংখ্য নমুনা জীবের বৈশিষ্ট্য ও পর্যবেক্ষণ করে তিনি জীবজগৎ কে প্রথমে দুইটি ভাগে যথা উদ্ভিদজগৎ এবং প্রাণিজগত হিসেবে বিন্যস্ত করেছিলেন।
এবং এই কেরালা সিনিয়াসের সময়কাল থেকেই শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তার ভাগ করা উদ্ভিদজগত এবং প্রাণীজগৎ হিসেবে বিবেচনা করেই দুইটি রাজ্যে শ্রেণীবিন্যাস করা হতো এই জীবজগত কে। এই শ্রেণীবিন্যাসের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিটি জীবের দল এবং উপদল সম্বন্ধে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণ করানো। তাই জীবজগতের ভিন্নতা দিক আলোকপাত করে আহহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার কাজও চলছিল। কেরালাস লিনিয়াস ছাড়াও এই শ্রেণীবিন্যাসের আরও যে সকল প্রকৃতিবিদ বা উদ্ভিদবিদগণ অবদান রেখেছিলেন তারা হলেন আর এইচ হুইটেকার ১৯৬৯ সালে জীবজগৎ কে তিনি পাঁচটি রাজ্য বা ফাইভ কিংডমে ভাগ করার প্রস্তাব করেছিলেন।
এরপর গ্রেগর জোহান মেন্ডেল তিনিও শ্রেণীবিন্যাসের অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করে গেছেন। শ্রেণীবিন্যাসের ওপর আমরা বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনা এতক্ষণ করলাম কিন্তু আমাদের দেখাতে হবে শ্রেণীবিন্যাস কাকে বলে সেই বিষয়টি। তাহলে চলুন দেখা যাক শ্রেণীবিন্যাস কাকে বলে?
শ্রেণীবিন্যাস: জীবের পারস্পারিক সম্পর্ক এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মিল ও অমিলের ভিত্তিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বিভিন্ন দল এবং উপদলে বাস তরে ধাপে পর্যায়ক্রমে সাজানো হয়। জীবজগৎ কে এভাবে সাজানোর নামই হচ্ছে শ্রেণীবিন্যাস। অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে সমস্ত জীবজগৎ কে অল্প পরিশ্রমে চেনা জানা বা এদের ধর্ম সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত সকল কিছু জানা যে নিয়মে হয়ে থাকে তাকেই জীববিজ্ঞানের শ্রেণীবিন্যাস বলা হয়ে থাকে।