রসায়ন হলো বিজ্ঞানের একটি শাখা। অর্থাৎ মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞানের আবিষ্কার শুরু করেছিল। অর্থাৎ মানুষ বা আদিম মানুষ যখন প্রাচীনকালে শীত নিবারণের কারণে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে বসেছিল সেই মুহূর্তে কোন একদিন মাংসের টুকরো খেতে খেতে আগুনের মধ্যে পড়ে যায় সেই মাংসের টুকরোটি পুনরায় আবার যখন আগুন থেকে তুলে ঝলসে যাওয়া মাংস খেতে থাকে তখন তার স্বাদ একটু অন্যরকম লাগে এবং ভালো লাগার কারণে পরবর্তীতে রান্না করা খাবার মানুষ খাওয়ার প্রচলন শুরু করে।
এভাবেই হয়তো আস্তে আস্তে বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলি শুরু হয়েছিল। আর রসায়নের কথা বিজ্ঞানের শুরুর যুগ থেকেই রসায়নের ভূমিকা রয়েছে অনন্য হবে। রসায়ন বিজ্ঞান জমিতে উর্বর করার জন্য বিভিন্ন বিক্রিয়া ঘটিয়ে ক্ষেতের সার তৈরি করেছে। ক্ষেতের ফসল যেন পোকামাকড়ে নষ্ট না করে তার জন্য মানুষ তৈরি করেছে কীটনাশক। এরপর ফসল রক্ষার থে অর্থাৎ খাদ্য সংরক্ষণে রসায়ন তৈরি করেছে প্রিজারভেটিভস। কল রাত আছে যক্ষা ইত্যাদিতে একসময় অনেক লোক মারা যেত রসায়নের কল্যাণে আজ এসব রোগে কোন লোক মানুষ মারা যায় না।
প্রাচীনকালের দার্শনিকরা পদার্থের গঠন নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০ আপডেট দিকে গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ঘোষণা দেন যে প্রত্যেক পদার্থকে ভাঙতে থাকলে শেষ পর্যায়ে এমন এক ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে যাকে আর ভাঙ্গা যাবে না। ডেমোক্রিটাস এটির নাম দেন এটম। প্রায় একই সময়ে আবার আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের কোন কোন দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের এই মত প্রায় একই ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এই ধারণাগুলোর কোন পরীক্ষামূলক ভিত্তি ছিল না। এরপর অ্যারিস্টটল এই ধরণার বিরোধিতা করেন এবং তিনি তার যুক্তি সহ মতামত তুলে ধরেন। তখন অ্যারিস্টটল সহ অন্য দার্শনিকেরা মনে করতেন যে সকল পদার্থই মাটি, আগুন, জল ও বাতাস অর্থাৎ পঞ্চভুতে তৈরি। ফলে অ্যাটমের ধারণা অনেকদিন পর্যন্ত মানুষ আর গ্রহণ করেনি।
এরপর মধ্যযুগে আরবের দার্শনিকগণ কপার, টিন সিসা এসব স্বল্পমূল্যের ধাতু থেকে সোনা তৈরি করতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। তাদের আরেকটি চেষ্টা ছিল এমন একটি ঔষধ তৈরি করা, যা খেলে মানুষের আয়ু অনেক বেড়ে যাবে। এটাতেও তারা সফল হয়নি। তবে তারা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন ফলে সোনা বানাতে না পারলেও বিভিন্ন পদার্থ বিষয়ে সোনার মত দেখতে এমন অনেক পদার্থ তৈরি করেছিলেন এবং তাদের এই পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলো লিখে রেখেছিলেন। তাহলে বলা যায় মূলত এগুলোই ছিল রসায়নের ইতিহাস বা প্রথম পদ্ধতিগতভাবে রসায়ন চর্চা বা রসানের গবেষণা। এরপর মধ্যযুগীয় আরবের রসায়ন চর্চা কে সে সময় বলা হত আলকেমি। আর গবেষকদের বলা হতো আলকেমিস্ট। তাই এই ধারণা থেকে মনে করা হয় যে আলকেমিয়া শব্দটি থেকে আলকেমি এসেছে বা ক্যামিস্ট্রি উৎপত্তি হয়েছে।
রসায়নের প্রকৃত রহস্য উদ্ভাবন করে রসায়ন চর্চা প্রথম শুরু করেন অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়ে, রবার্ট বয়েল, স্যার ফ্রান্সিস বেকন, জন ডাল্টন সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ। এই কারণে এন্টনি ল্যাভয়সিয়কে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে। রসায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের আলোচনা কাকে বলে ইত্যাদি আলোচনা আমরা এতক্ষন করে ফেললাম। তাহলে অনেক আলোচনার পরে এ কথা তাহলে বলা যায় চলুন দেখি রসায়ন কাকে বলে?
রসায়ন: বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে তাকে রসায়ন বিজ্ঞান বলা হয়।
যেহেতু পৃথিবীর সকল কিছুই পদার্থ এবং শক্তি এই দুইটি ভাগে বিভক্ত। তাই আমাদের পদার্থ গুলির গঠন এবং ধর্ম সম্পর্কে জানলে সেই বস্তু বা পদার্থ গুলি কেমন আচরণ করবে ইত্যাদি আমরা বুঝতে পারবো। তাই রসায়ন আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারাদিনের প্রতিটি কাজকর্মে রসায়ন অবশ্যই ভূমিকা পালন করে থাকে। যে ব্যক্তি যে ধরনের কাজই করুক না কেন তাতে রসায়ন অবশ্যই মিশ্রিত থাকে। তাই আমাদের রসায়ন সম্পর্কিত কোনো বিষয় অবহেলা বিষয় নয়।