পৌরসভা ও ইউনিয়নের পার্থক্য

পৌরসভা একটি স্থানীয় সরকার এর অধীনে প্রশাসনিক বিভাগ। এই পৌরসভা স্থানীয় জাতীয় ও আঞ্চলিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। পৌরসভার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে মিউনিসিপ্যালিটি বা Municipality. পৌরসভা জাতীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হলেও এটি একটি স্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান। পৌরসভার শব্দটির অর্থ প্রদত্ত পৌরসভার মহাপরিচালক বা মহাশাসকও হতে পারে। পৌরসভা কে প্রশাসনিক মহকুমা একটি বিশেষ উদ্দেশ্যযুক্ত জেলার বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভার সর্বোচ্চ ব্যক্তি বা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন মেয়র বা নগরপতি বা নগরপিতা হয়ে থাকেন। এনি পৌরসভার নাগরিকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। পৌরসভা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন।

এগুলোর মধ্যে অর্থাৎ পৌরসভার মধ্যে সকল ধরনের নিয়ম শৃঙ্খলা আইন কানুন এবং পৌরসভা বাসীগণের সুযোগ সুবিধার দিকে খেয়াল রাখেন। পৌরসভার নাগরিকদের জন্য পৌরসভা সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন যেমন রাস্তাঘাট আলো অর্থাৎ সড়ক বাতি বিভিন্ন ধরনের জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নাগরিকদের জন্ম সনদ মৃত্যু সনদ ইত্যাদি পৌরসভা থেকেই প্রণয়ন করা হয়। যেকোনো সুযোগ-সুবিধা পৌরসভা দিয়ে থাকেন। সকল নাগরিকদের রাস্তাঘাট তৈরি মেরামত ইত্যাদি ও পৌরসভা করে থাকে। পৌরসভার শব্দটি ইংরেজি”Municipal” ভাষা থেকে এসেছে। এই শব্দটি আবার ল্যাটিন থেকে আহরিত একটি শব্দ municipium শব্দ যার অর্থ দায়িত্ব হোল্ডার থেকে উদ্ভূত।

আবার পৌরসভার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে আমাদের বাংলাদেশে ঢাকা পৌরসভার সর্বপ্রথম ১৮৬৪ সালে গঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হয় ১৯৭৭ সালে। এবং স্বাধীন বাংলাদেশ স্থানীয় সরকার আইন ২০০৯ অনুসারে সকল পৌরসভা গুলি পরিচালিত হয়। এবার আসা যাক ইউনিয়ন কাকে বলে? কয়েকটি গ্রাম বা ওয়ার্ড মিলে তৈরি হয় ইউনিয়ন। যা বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার এর একটি একেবারে তৃণমূলের একটি প্রতিষ্ঠান। এই ইউনিয়নগুলি জনগণের অর্থাৎ তৃণমূল জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। এবং প্রান্তিক মানুষের চাওয়া-পাওয়ার বা সুযোগ-সুবিধা চাওয়া পাওয়ার একেবারে প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান হল এই ইউনিয়ন। মানুষ তার যেকোনো প্রয়োজনে ছুটে যান ইউনিয়ন ভবনগুলিতে। এখান থেকে তারা তাদের সবকিছুই সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

তাই বলা যায় ইউনিয়ন পরিষদ হল বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একককে বোঝায়। এটি শুরু হয় গ্রাম চৌকিদারের আইনের ১৮৭০ এর অধীনে। তখন এই আইনের অধীনে প্রতিটি গ্রামে পাহারা ব্যবস্থা বা টহল ব্যবস্থার চালু করার উদ্দেশ্যে কতগুলো গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠিত হয়েছিল। এই ইউনিয়ন পরিষদের গঠনের বিস্তারিত দিক নির্দেশনা রয়েছে বেঙ্গল চৌকিদারী ম্যানুয়েল এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনুচ্ছেদে। সৃষ্টির সময় ইউনিয়ন পরিষদের নিরাপত্তা মূলক কর্মকাণ্ড গঠিত হলেও পরবর্তীতে এটি প্রান্তিক জনগণের সকল ধরনের কাজ করে থাকেন এই ইউনিয়ন পরিষদ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫৭১ টি ইউনিয়ন পরিষদ আছে। তবে এই ইউনিয়ন পরিষদের দীর্ঘ এবং ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস রয়েছে। কারণ অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় এই উপমহাদেশে স্থানীয় সরকারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। আর এই স্থানীয় সরকারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটি হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা গ্রাম পঞ্চায়েত এ ধরনের কোন সরকার ব্যবস্থা।

যা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হয় স্থানীয় জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা। তবে বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবিত বা প্রভাব দ্বারা পরিচালিত হয় এই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাটি। জাতীয় সরকারের মত স্থানীয় সরকার সার্বভৌম কোন প্রতিষ্ঠান নয়। জাতীয় সরকার বিভিন্ন সার্কুলার ও নির্দেশে মাধ্যমে স্থানীয় সরকার কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অর্থাৎ স্থানীয় সরকার নির্দিষ্ট এলাকার কর রেড ফ্রী স্টোল প্রভৃতি নির্ধারণ করে থাকেন এবং আদায় করে থাকেন। তাই দেখা যায় যে ইউনিয়ন পরিষদ বহু প্রাচীন একটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। তাহলে আমরা পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আমাদের এই পোস্টে তুলে ধরলাম। আপনারা এখান থেকে এই দুইটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত ভাল ধারণা নেওয়ার পর আপনারা অবশ্যই এদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাবেন। মূলত দুইটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান এবং একটি শহরাঞ্চলে শহরকেন্দ্রিক এবং অপরটি গ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *