মোহর অর্থাৎ মধ্যযুগের বা প্রাচীন যুগের টাকার বিপরীতে বা প্রচলিত ঘাতক টাকার মুদ্রা বা হল মোহর। এবং ধারণা করা হয় সেখান থেকেই মোহরানা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। মহর বা মোহর হল বিবাহের সময় কনের দাবিকৃত অর্থ বা সম্পদ যা তার হবু বরের বা বরের পিতার পক্ষ থেকে কনে কে তার দাবি মোতাবেক পূরণ করা অর্থ। এই দাবি পূরণ করা বা মেটানো ইসলাম ধর্মে অবশ্য কর্তব্য বা বাধ্যতামূলক। মোহর প্রদান করার মাধ্যমেই সম্পূর্ণ বিয়েটাকে বৈধতা দান করা হয়ে থাকে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে প্রাচীন আরবে যৌতুক প্রথা চালু ছিল সেখান থেকে যৌতুক প্রথাকে বিলুপ্ত করে মোহরানার দাবি মিটানোর বিষয়টি এসেছে বলে জানা যায়।
ইসলাম ধর্মে মোহরানা কত হবে তার কোন ধরা বাধা শখ নেই অর্থাৎ কোন সীমারেখা নেই। বরের আর্থিক অবস্থার ওপর সংগতি রেখেই এই মহরানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। রাসূল (সা.) বলেছেন, বিবাহের সবচেয়ে বড় শর্ত হল মোহর। তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশি মনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তাহলে তা তোমরা ভোগ করতে পারো। এরপর আসা যাক কাবিননামা সম্পর্কে।
কাবিননামা: কাবিননামা বলতে বোঝায় বিবাহের দালিলিক চুক্তি। বিবাহ করার জন্য লিখিত যে চুক্তি করা হয় তাকেই কাবিননামা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিবাহ সম্পাদনের জন্য বা বিবাহকে বৈধ হওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ যে দলিল বা কাবিননামা সেটি বিবাহের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। অর্থাৎ কাবিননামা ছাড়া বিবাহ বৈধ হয় না। বর্তমানে এই কাবিননামা একটি বিবাহের আইনি দলিল। আইনের দিক থেকেও এই কাবিননামা তৈরীর আমাদের বাংলাদেশে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পৌরসভা বা কয়েকটি ওয়ার্ড মিলে একটি করে কাজী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেটি সরকার কর্তৃক মনোনীত। কাজেই অর্থাৎ সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি এই কাবিননামা তৈরি করে থাকেন। কনের প্রাপ্য দেনমোহর আদায় স্ত্রীর ভরণ পোষণ উত্তরাধিকার নির্ণয় সন্তানের পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিবন্ধিত কাবিন নামায় একটি আইনে দলিল হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ বাংলাদেশে মুসলিম সমাজের মধ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হলে অবশ্যই তাদের বিয়ের বৈধতা হিসেবে কাবিননামা একটি অপরিহার্য দলিল। এই দলিল না থাকলে বিয়েটা কে বৈধ বলা হয় না এবং পরবর্তী যেকোনো জটিলতা নিরসনে অন্য কিছু দিয়ে এর মীমাংসা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই স্বামী স্ত্রী উভয়ের জীবনকে নিরাপদ এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য হলেও কাবিননামা করা অবশ্যই প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করা হয়।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৭৪ মোতাবেক প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে এটি আইন দ্বারা সিদ্ধ করা হয়েছে। এবং এই রেজিস্ট্রেশন অবশ্যই সরকার মনোনীত কাজীর কাছে গিয়ে বা কাজের নিকট উপস্থিত হয়ে এই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হবে। এবং বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধনের ফি হিসেবে বরপক্ষকেই অর্থ প্রদান করতে হয়। বিয়ে নিবেন নিবন্ধনের পর কাজী তথা নিকাহ রেজিস্টার স্বামী এবং স্ত্রীকে তৈরি কৃত কাবিননামায় তাদের তাদের দস্তখত অর্থাৎ সহী নিয়ে থাকেন। এবং কাজী সাহেব অবশ্যই স্বামী-স্ত্রীকে তাদের সত্যায়িত কপি কপি অর্থাৎ সার্টিফিকেট প্রদান করতে বাধ্য থাকেন।
আমরা এতক্ষন মোহরানা এবং কাবিননামা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য উপস্থাপন করলাম। তাহলে এখন আমরা দেখতে পারি যে মোহরানা এবং কাবিননামার মধ্যে পার্থক্য কি। চলুন তাহলে দেখা যাক-
তাহলে উপরোক্ত তথ্যগুলি থেকে দেখা যায় যে কাবিননামা বলতে বিবাহের চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি বোঝায়। অর্থাৎ সরকারিভাবে একটি দালিলিক চুক্তি হলো কাবিননামা। অন্যদিকে মহারানা হলো বিবাহ করার সম্মতিতে বা বিবাহের স্বার্থে বরপক্ষ কণেকে প্রদেয় মোহর বা অর্থ বা সমপরিমাণ স্বর্ণ দেওয়ার প্রথায় হচ্ছে মোহরানা।
নব দম্পতির দাম্পত্য জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিবাহের সময় পাত্র এবং পাত্রীর এবং উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিবাহ অনুষ্ঠান বা বিবাহর বৈধতা দেওয়ার জন্য যে চুক্তি সম্পাদিত হয় অর্থাৎ চুক্তিতে বা চুক্তির বিষয়বলি সম্পর্কিত নির্ধারিত ফর্মে উভয়পক্ষের অর্থাৎ বর এবং কনের নাম তাদের পিতার নাম মাতার নাম এবং তাদের পূর্ণ ঠিকানা বিবাহের তারিখ দেনমোহরের পরিমাণ উকিল গন এবং সাক্ষী গনের নাম সহ যে চুক্তিস্বাক্ষরিত হয় সেটি হচ্ছে কাবিননামা বলে পরিচিতি পায়।