আমাদের চারপাশে নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যাচ্ছে। এই সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া কখনো শক্তি উৎপন্ন করে কখনো ব্যবহার উপযোগী নতুন পদার্থ তৈরি করে আবার কখনো বা রোগ নিরাময় সাহায্য করে। রসায়নবিদগণ গঠন অনুসারে পৃথিবীর সকল পদার্থকে মৌলিক ও যৌগিক এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। এ পর্যন্ত মোট ১১৮টি মৌলিক পদার্থের কথা জানা গেছে। সাধারণত মৌলের পুরো নাম না লিখে ইংরেজি বা ল্যাটিনামের একটি বা দুইটি অক্ষর দিয়ে সংক্ষেপে মৌলটিকে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। মৌলের পুরো নামের এই সংক্ষিপ্ত রূপকে আমরা প্রতীক বলে থাকি। যেমন হাইড্রোজেন এর প্রতীক H, অক্সিজেন এর প্রতীক O, ক্যালসিয়ামের প্রতীক Ca ইত্যাদি। যৌগের সংকেত লেখার সময় আমাদেরকে মৌলের যোজনী সংখ্যা সম্পর্কে জানতে হয়। মৌলের যতনে সংখা অনুযায়ী মৌলগুলো একে অন্যের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে।
মৌলিক পদার্থের যোজনী কে আমরা এক একটি হাতের সাথে তুলনা করতে পারি। যে মৌলের একটি হাত তার যোজনী হবে এক। হাইড্রোজেন এবং ক্লোরিন উভয়েই এক হাত বিশিষ্ট মৌল। অর্থাৎ উভয়ের যোজনী এক। তাই হাইড্রোজেন ক্লোরাইড সংকেত হবে HCl । অক্সিজেনের যোজনী অর্থাৎ অক্সিজেনের একটি পরমাণুর দুইটি হাত আছে। এ দুটি হাত দিয়ে অক্সিজেন এক যদি বা একহাত বিশিষ্ট দুইটি হাইড্রোজেনের পরমাণুকে ধরতে পারে। এই কারণে পানির সংকেত H2O । আমরা এটা জানি যে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু ভিন্ন ভিন্ন হয়। এ পর্যন্ত যে ১১৮টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে 98 টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায় আর বাকি বৃষ্টি কৃত্রিমভাবে তৈরি করতে হয় ল্যাবরেটরীতে। প্রতিটি মৌলিক তাড়াতাড়ি একটি নাম আছে। আর এই সংক্ষিপ্ত ও সুবিধাজনকভাবে প্রকাশের জন্যই আমরা প্রতিটির জন্য আলাদা আলাদা প্রতীক ব্যবহার করে থাকি।
এই মৌলগুলোর প্রতীক সাধারণত মৌলের ল্যাটিন, গ্রীক বা ইংরেজি নামের একটি বা দুটি আদ্যক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি অক্ষর দিয়ে প্রকাশিত প্রতীকের ক্ষেত্রে সর্বদাই বড় হাতের অক্ষর আর দুটি অক্ষর দিয়ে প্রকাশিত প্রতীকের ক্ষেত্রে প্রথমটি বড় হাতের অক্ষর এবং পরের টি ছোট হাতের অক্ষরই ব্যবহার করতে হয়। আমরা জানি যে দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রে যুক্ত হয়ে কোন পদার্থের অনু তৈরি হয়। আর একটি অণুতে কি কি পরমাণু আছে সেটা জানা যায় সংকেত থেকে। তবে মৌলিক পদার্থের সংকেত এবং যৌগিক এর সংকেত আলাদা আলাদা ভাবে গঠিত হয়। কঠিন বা তরল মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় অনেক পরমাণু একসাথে থাকে কোন অনু গঠন করে না।
তাই এ ধরনের মৌলের ক্ষেত্রে অনুর সংকেত লেখা হয় না। যেমন: সোডিয়াম, লোহা, কপার ইত্যাদি। তবে গ্যাসীয় মৌলসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণত দুইটি পরমাণু যুক্ত হয়ে অনু গঠন করে। এজন্য তাদের সংকেত লেখা হয় প্রতীকের নিচে ডানপাশের ছোট করে দুই লিখে। যেমন অক্সিজেনের সংকেত O2 নাইট্রোজেন N2 এর সংকেত। তবে কিছু কিছু তরল ও কঠিন মৌলের ক্ষেত্রেও দুইটি পরমাণু যুক্ত হয়ে অনু গঠন করে। তাদের সংকেত লেখা হয় প্রতীকের নিচে ডান পাশে ছোট করে দুই লিখে। যেমন ব্রোমিন এর সংকেতBr2 । যৌগিক বাড়াতে সংকেত থেকে বোঝা যার জগতে কি কি মৌল ও পরমাণু গুচ্ছ দিয়ে এবং কি অনুপাতে তৈরি। পানির সংকেত থেকে বোঝা যায় একটি প্রাণীর অণু দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু থেকে তৈরি। তাহলে আমরা এখন দেখতে পারি সংকেত কাকে বলে।
সংকেত: দুই বা ততোধিক পরমাণু একত্রে যুক্ত হয়ে অণু তৈরি করে। একটি অণুতে কি কি পরমাণু আছে সেটা জানা যায় তার সংকেত থেকে। আসলে অনুর সংক্ষিপ্ত প্রকাশই হল সংকেত। একটি অনু যে যে মৌলের পরমাণু দিয়ে গঠিত সেসব মৌলের প্রতীক দিয়ে সংকেত লেখা হয়।