ইংরেজি Culture শব্দ থেকে বাংলা সংস্কৃতি শব্দটি এসেছে। অর্থাৎ Culture থেকে সংস্কৃতি শব্দটি বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম ১৯২২ সালে অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন থেকে সংস্কৃতি শব্দটি বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সংস্কৃতি শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল- চিত্র প্রকর্ষ বা মানবীয় বৈশিষ্ট্যের উৎকর্ষ সাধন। তবে সংস্কৃতি শব্দটির দ্বারা আরো ব্যাপক অর্থে অনেক কিছুই বুঝিয়া থাকে। অর্থাৎ একটি জাতি গোষ্ঠীর চালচলন আচার ব্যবহার এক কথায় বলতে গেলে তাদের যাবতীয় বিষয়বস্তুকে এই সংস্কৃতি বলে মানা হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাংলাদেশের চিরাচরিত নিয়ম-কানুন আচার অনুষ্ঠান সবকিছুকেই বাঙালি সংস্কৃতি বলে বোঝানো হয়। তাই বলা যায় একটি শব্দের মধ্যে সংস্কৃতি বদ্ধ থাকে না এর অর্থ ব্যাপক অর্থে বুঝিয়া থাকে। তাই বলা হয় যে একটি জাতির যাবতীয় বিষয়বস্তুকে সংস্কৃতির মধ্যে তুলে ধরা যায়।
অর্থাৎ এ কথা বলা যায় যে সংস্কৃতির সামগ্রিকতা এমন বা জটিল বিষয়ে যা তার মধ্যে অন্তর্গত আছে জ্ঞান বিশ্বাস নীতি-নৈতিকতা শিল্প আইন আচার এবং সমাজের একজন সদস্য হিসেবে মানুষের দ্বারা অর্জিত সকল জ্ঞান-গরিমাকে বুঝিয়ে থাকে। অপরদিকে সভ্যতা বলতে আবার বোঝায় যে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর বা অঞ্চলের লোকদের উন্নত জীবনধারাকে বুঝিয়ে থাকে। এ বিষয়ে অবশ্য অনেক সমাজ বিজ্ঞানী বিভিন্ন ধরনের তাদের মতামত দিয়েছেন। আমরা এখানে দুই একজন বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানীর মতামত তুলে ধরতে পারি তাহলে বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত সহজ হবে বলে আশা রাখা যায়।
এ বিষয়ে বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী জেরির মতে “সভ্যতা হচ্ছে সংস্কৃতির উন্নত ধরন যেমন- কেন্দ্রীয় সরকার, শিল্পকলা ও শিক্ষণের উন্নয়ন, নীতি-নৈতিকতার সমন্বিত রূপ যা নগরের সাথে সম্পর্কিত এবং বৃহত্তর সমাজ যার মধ্যে নির্দিষ্ট।”
আবার সমাজবিজ্ঞানী ‘স্কট’ বলেন- “সভ্যতা হচ্ছে একটি উচ্চতর জটিল বিষয় যা সংস্কৃতির সাথে আপেক্ষিকতার আলোকে তুলনা করা হয়।”
এই প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী বটোমোর এর মতামত হলো- “সভ্যতা হলো কতকগুলো নির্দিষ্ট মানবগোষ্ঠীর অভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহের সমন্বয়”।
তাই দেখা যায় বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী তাদের মতামত বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। তাই সব মিলিয়ে আমরা সভ্যতা বলতে বুঝি যে, সভ্যতা হলো সংস্কৃতির ও অধিকতর এগিয়ে যাওয়া ও জটিল বিষয়গুলি যা বিভিন্ন সমাজে স্পষ্টই দৃশ্যমান হতে থাকে ধীরে ধীরে। আরো স্পষ্ট কথায় বলা যায় সভ্যতা হলো সংস্কৃতির উপরের ধাপ অর্থাৎ যেখানে মানুষ তার ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা থাকে এবং মানবকল্যাণে সেগুলি ব্যবহার হয় বা মানব কল্যাণে প্রয়োজন আসে এ ধরনের জিনিস তারা ব্যবহার করে এবং আবিষ্কারের সাহায্য করে তাই হচ্ছে সভ্যতা।
এখন তাহলে আমরা সংস্কৃতি এবং সভ্যতার মধ্যে যে ধরনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তা আস্তে আস্তে সুন্দর ভাষায় তুলে ধরতে পারি।
১. সংস্কৃতি হল মানুষ যা কিছু করে অর্থাৎ একটি জাতি গোষ্ঠী বা অঞ্চলের মানুষ যা কিছু করে তাকেই সেই অঞ্চলের সেই গোষ্ঠীর সেই পাশাপাশি লোকের সংস্কৃতি বলা হয় আর অপরদিকে সভ্যতা হলো যা মানুষ ব্যবহার করে তাকেই সভ্যতা বোঝায়।
২. কোন দেশের কোন এলাকার কোন ভাষাভাষীর মানুষের সাংস্কৃতি হল তাদের ভেতরের রূপ। অপরদিকে সভ্যতা হলো সেই অঞ্চলের সেই দেশের সেই ভাষাভাষীর লোকদের বাইরের ব্যবহার কে বোঝায়।
৩. সংস্কৃতি পরিমাপ করার জন্য কোন মানদন্ড এখনো তৈরি হয়নি কিন্তু সভ্যতা পরিমাপের জন্য বিশ্ব দরবারে মানদন্ড রয়েছে। তাই বলতে পারি সংস্কৃতির পরিমাপ করা যায় না কিন্তু সভ্যতা পরিমাপ করা যায়।
৪. সংস্কৃতি ওই গোষ্ঠীর মধ্যে খুব ধীরগতিতে বয়ে চলে আর সভ্যতা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে।
৫. সংস্কৃতির চাহিদা এবং আবেদন অপেক্ষাকৃত কম হয়ে থাকে অন্যদিকে সভ্যতার চাহিদা এবং আবেদন সংস্কৃতির চাইতে অনেক বেশি হয়ে থাকে।
৬. সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা যায় না কিন্তু আমরা পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই অনেক সভ্যতায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
আমাদের এই পোস্ট বা লিখায় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য মতামত তুলে ধরা হলো তাহলে আপনারা অবশ্যই সাংস্কৃতি এবং সভ্যতার মধ্যে পার্থক্য গুলি অবশ্যই বুঝতে পারলেন।