আমরা জানি মানুষ তার মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য তার কণ্ঠ ধ্বনি এবং হাত-পা চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। অর্থাৎ কন্ঠ ধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারা যায় না। তাই কন্ঠ ধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের শিক্ষার্থী সূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ করতে সমর্থ্য হয়ে থাকে। এই কারণে কন্ঠ ধ্বনি বলতে মুখ গহ্বর কন্ঠনাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনির সমষ্টিকে বোঝায়। আর তাই আমরা বলতে পারি যে ধ্বনি হচ্ছে ভাষার মূল উপাদান। ধ্বনির সাহায্যেই ভাষার একটি সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ পায়। আবার ধ্বনির সৃষ্টিও হয় মানুষের বাক যন্ত্রের দ্বারা। পৃথিবীর সকল মানুষই কোন না কোন ভাষায় কথা বলে। আর এই কারণে বিভিন্ন মানব গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা ভাষার সৃষ্টিও হয়েছে।
অর্থাৎ পৃথিবীর এক এক দেশের এক এক অঞ্চলের এক এক রকম ভাষা হয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক ভাবেও কোন কোন ভাষার প্রচলন রয়েছে। মানুষের কন্ঠ নিঃসৃত বাক সংকেতের সংগঠনকে ভাষা বলা যেতে পারে না অর্থাৎ বাক যন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক ধ্বনির সংকেতের সাহায্যে মানুষের ভাব প্রকাশের মাধ্যমেই হল ভাষা। আমরা জানি যে দেশ কাল এবং পরিবেশ হিসেবে ভাষার পার্থক্য এবং পরিবর্তন ঘটে থাকে। তাই বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থান করে মানুষ আপন মনোভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বস্তু এবং ভাবের জন্য বিভিন্ন ধ্বনির সাহায্যে শব্দের সৃষ্টি করেছে। আমরা জানি বিভিন্ন ভাষার প্রকার রয়েছে। এই বিভিন্ন ভাষার প্রকাশের মধ্যে আমরা বলতে পারি যে লৈখিক ভাষা মৌখিক ভাষা আবার সাধু ভাষা চলিত ভাষা আঞ্চলিক ভাষা বিভিন্ন ধরনের উপভাষা ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষার প্রচলন আমাদের বাংলা ভাষায় রয়েছে। এক সময় আমাদের বাংলা ভাষায় শুধুমাত্র সাধু ভাষায় সাহিত্য রচনা হতো।
এই সাধু ভাষাটি শুধু রচনার ক্ষেত্রে বা লেখার ক্ষেত্রে প্রচলন ছিল। তবে মানুষের মুখের ভাষাটা ছিল চলিত ভাষা। কিন্তু পরবর্তীতে সাহিত্য রচনার সেই গণ্ডি পেরিয়ে আমাদের লেখক ও উপন্যাসিক কবি এদের হাত ধরে চলিত ভাষায় সাহিত্য রচনা হয়েছে। বাংলা ইংরেজি আরবি হিন্দি প্রভৃতি ভাষার মৌখিক বা তথ্য এবং লৈখিক বা লক্ষ এই দুটি রূপ দেখা যায়। ভাষার মৌখিক রূপের আবার রয়েছে একাধিক রীতি চরিত রীতি আঞ্চলিক রীতি ইত্যাদি। বর্তমান যুগে এসে ভাষ ার আরো পরিপূর্ণতা লাভ করছে। কারণ এক সময় যখন শুধু সাধুরাধি এবং চরিত্রে ছিল সাহিত্য রচনা গান নাটক কবিতা ইত্যাদি রচনার বিষয়।
কিন্তু বর্তমান প্রজন্মে দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় ও গান কবিতা নাটক উপস্থাপন হচ্ছে। যদি একসময় কল্পনাই করা যেত না। তাই ভাষার ক্ষেত্রে কোন বাধা ধরা নিয়ম থাকলেও এখন অনেকটাই সেটা শিথিলযজ্ঞ হয়েছে। অর্থাৎ যে রোগটি মানুষ গ্রহণ করছে সেই রূপটি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন একসময় আঞ্চলিক ভাষা বলতে শুধুমাত্র ঢাকাইয়া ভাষায় নাটক রচনা হতো কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন ধরনের নাটক রচনা হচ্ছে এবং সেগুলি মঞ্চস্থ হচ্ছে। ফুল পেড়িয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পরল তারই মধ্যে দিয়ে রাস্তা বসবাস করে শুকনো বাস পাতার হ্রাস ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙ্গে যেতে লাগলো। এই লাইনটুকু বাংলা ভাষার চলিত রীতিতে বলা। আবার এটি যদি শাশুড়ি দিতে বলা হয় অন্যরকম হবে।
যেমন পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পরিল তারি মধ্য দিয়ে রাস্তা চলিতেছে মচমছ করে শুকনো বাঁশপাতার হ্রাস বাসের খোসা জুতার তলায় ভেঙ্গে যাইতে লাগিল। তাই আমাদের বাংলা ভাষা অবশ্য সকল রীতিনীতি এই ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে শুধু কোন এক প্রকার ভাষা বা রীতির কারণে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ নয়। তাহলে আমরা এবার দেখে নিতে পারি সাধু ভাষা কাকে বলে?
সাধু ভাষা: বাংলা লেখ আধুরি দিতে সু নির্ধারিত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলা পদবিন্যাস ও নিয়ন্ত্রিত এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে চলার ভাষার রুপি হচ্ছে সাধুরূপ বা সাধুরিতি। ও সাধুর রীতিতে শুধুমাত্র সাহিত্য রচনা হতো এটি গুড়গম্ভীর এবং তৎসম শব্দবহুল একটি রীতি।