ব্যাপন এবং অভিস্রবণ দুইটি উদ্ভিদের শরীর বৃত্তীয় কাজের অংশ। যেহেতু উদ্ভিদ এবং প্রাণী উভয়ের ক্ষেত্রেই পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। অর্থাৎ আমরা বলে থাকি পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া কোন জীব বাঁচতে পারে না। ব্যাপন এবং অভিস্রবণ এর পার্থক্য দেখাতে আমাদের অবশ্যই ব্যাপন এবং অভিস্রবণ কি এই জিনিস দুইটি সম্পর্কে বিস্তারিত আগে জানতে হবে তবেই আমরা এর পার্থক্য দেখাতে পারবো। তাহলে আমরা দেখি যে ব্যাপন কাকে বলে ব্যাপন কি?
ব্যাপন: আমরা ঘরের এক কোণে যদি কোন সুগন্ধির শিশির মুখ খুলে রাখি তাহলে ঘরের অপর কোণ থেকেও তার সুগন্ধ বা সুঘ্রাণ আমরা পেয়ে থাকি। আবার রান্নাঘরে মা যদি পোলাও রান্না করে তাহলে তার গন্ধও আমরা অনেক দূর থেকে পেয়ে থাকি। এই সুগন্ধি বা দুর্গন্ধ যাই হোক ছড়িয়ে পড়ার একটি প্রক্রিয়া আছে। অর্থাৎ গন্ধ যে প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেটিই হচ্ছে ব্যাপন প্রক্রিয়া। কারণ এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমেই ব্যাপনের সৃষ্টি হয়। আমরা যদি আরেকটু দেখি বা আরেকএকটিভ পরীক্ষা দেখি সেটি হল এক গ্লাস জলের মধ্যে যদি কিছু চিনি ছেড়ে দেই তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখব যে গ্লাসের সমস্ত জল মিষ্টি হয়ে গেছে। এখানেও চিনির অণুগুলো জলের মধ্যে ছড়িয়ে পুরো দলকে মিষ্টি সাদৃপ্ত করে তুলেছে।
এই প্রক্রিয়াকেই ব্যাপন বলা হয়। ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া। অর্থাৎ পদার্থের শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন দ্রব্যের অণু বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাকেই ব্যাপন প্রক্রিয়া বলে। একই তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডলীয় চাপে কোন পদার্থের বেশি ঘনত্ব বিশিষ্ট দ্রবণ থেকে কম ঘনত্বের দ্রবণের দিকে দ্রাবকের ব্যাবিত হওয়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা রয়েছে আর এই প্রচ্ছন্ন ক্ষমতাকেই ব্যাপন চাপ বলা হয়।
অভিস্রবণ প্রক্রিয়া: অভিস্রবণ হলো উদ্ভিদের মাটি থেকে যে প্রক্রিয়ায় জল গ্রহণ করে সেটিই হচ্ছে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আমরা যদি খেয়াল করে থাকি তাহলে দেখব যে যখন কিসমিস ছোলা অথবা এ জাতীয় কোন শুকনো জিনিস যখন জলে ভিজিয়ে রাখবো তার কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে যে ছোলা অথবা কিসমিস বেশ সুন্দর হয়েছে।
এর কারণ হচ্ছে শুকনো কিসমিস গুলো বাইরের জল গ্রহণ করে এত সুন্দর হওয়ার কারণ। তাই ওই টসটসে কিসমিস যদি আবার আমরা ঘন চিনির দ্রবণে ভিজিয়ে রাখি তাহলে দেখব যে সেগুলো আবার চুপসে গেছে। এর কারণ হচ্ছে কিসমিস গুলি যে জল গ্রহণ করেছিল সেগুলি আবার চিনির দ্রবণে গিয়ে অর্থাৎ কম ঘনত্বে গিয়ে সেগুলি বের করে দিয়েছে। এই কারণে ছোলা বা কিসমিস চিনির দ্রবন দ্রবণে দেওয়ার পর সেটি চুপসে গিয়েছে। এ ধরনের প্রক্রিয়াটি জীবন্ত কোষ ছাড়াও কৃত্রিমভাবে আমরা ল্যাবরেটরীতে ঘটাতেও পারি। যদি দুইটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ যাদের দ্রব এবং দ্রাবক একই হয়ে থাকে তারা একটি বৈষম্য ভেদ্য পর্দা দিয়ে আলাদা করা হয় তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুটি দ্রবণের ঘনত্ব সমান হয়ে যাবে। এই পরীক্ষাটি আমরা আলু এবং খাবার লবণ দিয়ে করে ফেলতে পারি।
তাই বলা হয় অভিস্রবণ প্রকৃতপক্ষে ব্যাপন। কেননা এক্ষেত্রে যেদিকে দ্রাবকের পরিমাণ আনুপাতিকভাবে বেশি থাকে সে দিক থেকে যাবক প্রবাহিত হয় সেই দিকে যেদিকে যাব এর পরিমাণ অনুপাতিকভাবে কম থাকে সেই দিকে। তাই অভিস্রবণ বলতে অন্যভাবে বলতে পারি যে অভিস্রবণ হলো দ্রাবকের উচ্চ ঘনত্বের থেকে লাবকের নিম্ন ঘনত্বের দিকে দ্রাবকের প্রবাহ অর্থাৎ যবের পক্ষে বৈষমবৃদ্ধ পর্দা অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমরা অভিস্রবণ এবং জ্ঞাপন সম্পর্কিত সকল তথ্য আমাদের এই লিখায় উপস্থাপন করলাম আপনারা এখান থেকে অবশ্যই জ্ঞাপন এবং অভিস্রবণের সকল পার্থক্যগুলি আলাদা করে নিতে পারবেন অবশ্যই। তাই অভিস্রবণ এবং জ্ঞাপন এর সকল পার্থক্য দেখে নেন আমাদের এই লিখা থেকে।