অপরাধ ও বিচ্যুতির মধ্যে পার্থক্য

অপরাধ এবং বিচ্যুতি দুইটিকে সমার্থক শব্দ মনে হলেও আসলে দুইটির অর্থ বা ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিচ্যুতি আচরণ বলতে আমরা বুঝে থাকি যে আমাদের সমাজে বা আমাদের দেশের প্রতিটি সমাজেই কিছু কিছু আচরণকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এই আদর্শ আচরন গুলির মধ্যে হল ছোটদেরকে স্নেহ করা বড়দেরকে সম্মান করা গুরুজনে ভক্তি দেওয়া শিক্ষককে দেখলে তাকে মান্য করা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে আমরা এ ধরনের আদর্শ রীতি নীতি মূল্যবোধ ইত্যাদি একটি ভাল মানুষের আচরণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এ ধরনের আচরণ যদি কেউ না করে তাহলে তার সেই আচরণকে বিচ্যুতি আচরণ বলে ধরে নেওয়া হয়। অর্থাৎ সে ব্যক্তি এই আচরণ গুলি না করলেই সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা বিচ্যুতি ঘটেছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। তাই আমরা বলতে পারি সমাজের এসব রীতিনীতি মূল্যবোধ ভঙ্গ করাকেই বিচ্যুতি বলা হয়।

এ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী ওপেন ও বলেন যে,”বিচ্যুতি হচ্ছে এমন এক আচরণ, যা কোনো গোষ্ঠী বা সমাজের সামাজিক মূল্যবোধকে ভঙ্গ করে”। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে বিচ্যুতি হল এক ধরনের আচরণ, আর এ আচরণ সমাজের মূল্যবোধ ও রীতিনীতি ভঙ্গ করে এবং এই আচরণ সমাজ কর্তৃক অবাঞ্চিত অনাকাঙ্ক্ষিত।

আবার আমরা অপরাধ বলতে বুঝে থাকি -যে সকল কাজ সমাজ দেশ রাষ্ট্রবিরোধী আইন বিরোধী বা আইনের পরিপন্থী হয় যে কাজ করলে শাস্তি ভোগ করতে হয় অর্থাৎ দেশের আইন তাকে শাস্তি দেয় সেই কাজকে অপরাধ বলা হয়ে থাকে। আর তাই আমরা বলতে পারি যে বিচ্যুতি সমাজের নিয়ম-কানুনের পরিপন্থী বা মূল্যবোধ এর পরিপন্থী আর অপরাধ হলো রাষ্ট্রবিরোধী সমাজবিরোধী আইন বিরোধী কর্মকাণ্ড। তাই বিচ্যুতি এবং অপরাধ আসলে দুটি দুই রকমের জিনিস। অপরাধ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।

চুরি হত্যা ফোন ধর্ষণ ইত্যাদি খুব জঘন্য অপরাধের মধ্যে পড়ে থাকে। আবার কিছু কিছু অপরাধ আছে ছোটখাটো সেই অপরাধ গুলি সমাজের চোখে দেশের আইনের চোখে অতটা খারাপ না হলেও খুন হত্যা ধর্ষণ ছিনতাই রাহাজানি লুটপাট এগুলি খুব খারাপ অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত এ সকল অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করা বা এ ধরনের অপরাধ যেন কখনো সংঘটিত না হয় সেদিকে সকলের সচেষ্ট থাকা। তবে আরেকটি কথা হলো বিচ্যুতি থেকেই অপরাধের জন্ম হতে পারে। তাই বেচ্যুতিকে ছোট ভাবে দেখলেও ঠিক হবে না কারণ অপরাধের পূর্ব মুহূর্তই হতে পারে বিচ্যুতি। তাই প্রাথমিকভাবে বিচ্যুতি অপরাধ না ধরলেও এই বিচ্যুতি থেকেই বড় বড় অপরাধের জন্ম হতে পারে তাই বিচ্যুতি থেকেও আমাদের সাবধান থাকতে হবে। সমাজের কাউকে যেন এ ধরনের বিচ্যুতি না ঘটে বা বিচ্যুতি ঘটলে তাকে সংশোধন করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।

আমরা আমাদের এই পোস্টে অপরাধ এবং বিচ্যুতি এই জিটু সম্পর্কেই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। আশা করি এই আলোচনা থেকে আপনারা অপরাধ এবং বিচ্যুতি দুইটি সম্পর্কেই ভালোভাবে অবহিত হয়েছেন। বুঝতে পেরেছেন অপরাধ কি এবং বিচ্যুতি কি। আরো অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন যে অপরাধ এবং বিচ্যুতি দুইটি দুই ধরনের জিনিস তাই সমার্থক অর্থে দুটিকে মিলানো যাবে না। পরিশেষে বলা যায় অপরাধ করলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি বিধান রয়েছে আমাদের দেশীয় আইনে। অপরাধের বিভিন্ন ধরনের শাস্তি হলেও এদিক থেকে আমরা দেখতে পাই বিচ্যুতির ক্ষেত্রে সমাজে তেমন ধরনের কোন শাস্তি নেই। তবে সমাজের কারো বিচ্যুতি ঘটলে তাকে অবশ্যই ভালো চোখে দেখা হয় না। তাই অবশ্যই আমাদের সকলেরই জানতে হবে বুঝতে হবে দুটি খারাপ জিনিস অপরাধ এবং বিচ্যুতি দুটোই। যেমন আমরা অপরাধ করব না আবার যাতে বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *