দুটি সন্নিহিত ধ্বনির মিলনের নাম সন্ধি। যেমন- আশা + অতীত = আশাতীত। হিম+ আলোয় = হিমালয়। এইভাবে সন্ধি বিচ্ছেদ করতে হয়। বাংলা ব্যাকরণের একটি বিশেষ অংশ এই সন্ধি বিচ্ছেদ। সন্ধের উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক উচ্চারণে সহজ প্রবণতা এবং সন্ধিগত মাধুর্য সম্পাদন হয়ে থাকে। যেমন বলা যেতে পারে যে আশা ও অতীত এই উচ্চারণে যে আয়াস প্রয়োজন অর্থাৎ আশাতীত তার চেয়ে অল্প আয়াসে উচ্চারিত হয়। সেরূপভাবে আবার বলা যায় যে হিম আলোয় বলতে যে রূপ শোনা যায় অর্থাৎ শোনা যায় হিমালয়।
এই হিমালয় এর চেয়ে সহজে উচ্চারিত এবং শ্রুতি মধুর হয়ে থাকে। এই কারণে যে ক্ষেত্রে আয়েশের লাঘব হয় কিন্তু ধনী মাধুর্য রক্ষিত হয় না সেই ক্ষেত্রে সন্ধি করার নিয়ম নেই। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে- কচু+ আদা + আলু= কচ্চাদালু হয় না। মানুষ কথা বলার সময় কথার গতি বৃদ্ধি পায়। দ্রুত কথা বলার সময় কখনো কখনো দুটো শব্দের কাছাকাছি থাকা দুটো ধনের উচ্চারণ একত্রিত হয়ে যায়। ব্যাকরণে একে সন্ধি বলা হয়। যেমন: আমি বিদ্যা আলোয়ে যাব। বাক্যটি বলার সময় আমি বিদ্যালয়ে যাব হয়ে যায়।
এখানে বিদ্যা এর আধুনিক এবং আলোয় এর আধুনিক মিলে গেছে। এজন্য ড শহীদুল্লাহ লিখেছেন যে- দুইটি বর্ণ অত্যন্ত নিকটবর্তী হলে উচ্চারণের সুবিধার জন্য উভয়ের মিলন হয়ে এক বর্ণ বা একের রূপান্তর বা একের লোভ বা উভয়ের রূপান্তর হলে এরূপ মিলনকে সন্ধি বলে। এই সন্ধ্যার আলোকে বলা চলে যে। বা আমরা বুঝে নিলাম যে সন্ধি কাকে বলে। সাধারণ অর্থে বলা যায় যে সন্ধি শব্দের অর্থ মিলন। এ কথাটি আমরা আগেই বলেছি। দুটো ধনের সন্ধিতে প্রথম শব্দের শেষ ধনী এবং পরের শব্দের প্রথম ধ্বনির মিলন ঘটে। সন্ধির ফলে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়।
কথা বলার সময় শব্দের উচ্চারণ সহজ হয়। ভাষা সংক্ষিপ্ত হয় এবং শুনতেও ভালো লাগে। ব্যাকরণ এর সন্ধি সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে। বা সন্ধিতে ধ্বনির চার ধরনের মিলন হয়। যেমন- ভয় ধ্বনি মিলে একটি ধ্বনি হয়।
একটি ধ্বনি বদলে যায়।
একটি ধ্বনি লোক পায়। এবং
উভয় ধ্বনির বদলে নতুন ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত শব্দ কোনরকম পরিবর্তন ছাড়া ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলোকে তার সময় শব্দ বলা হয়।
এসব তৎসম শব্দের সন্ধি সংস্কৃতের নিয়মেই হয়ে থাকে। তাই সংস্কৃতির নিয়ম মেনে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত তৎসম শব্দের সন্ধি তিন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা: স্বদেশ সন্ধ্যে ব্যঞ্জন সন্ধি এবং বিসর্গ সন্ধি।
স্বরসন্ধি: শাহরুখ খানের সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয় তাকে সরসন্ধি বলে।
যেমন: সোনা+ আলি = সোনালি, রুপা +আলি= রুপালি ব্যঞ্জন সন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জন ধ্বনি কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি মিলিত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি হলে। যেমন: কাঁচা+ কলা = কাঁচকলা, নাতি + বউ = নাতবৌ
বিসর্গ সন্ধি: বিসর্গ এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিভাবে ব্যঞ্জনধ্বনির চেয়ে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে।
উচ্চারণের দিক থেকে বিসর্গ দুই রকমের হয়। একটা হলো র জাত বিসর্গ এবং অপরটির স জাত বিসর্গ।
র জাত বিসর্গ: শব্দের শেষে র থাকলে উচ্চারণের সময় রলপায় এবং এর জায়গায় বিসর্গ হয়। উচ্চারণে বজায় থাকে।
স্ জাত বিসর্গ: শব্দের শেষে শখ থাকলে ধনীর সময় লোক পায় এবং সো এর জায়গায় বিসর্গ হয়। উচ্চারণের বজায় থাকে। তাহলে আমরা বাংলা ব্যাকরণ এর সন্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিলাম। সন্ধি কাকে বলে সন্ধ্যে কত প্রকার কি কি। এবং কোন প্রকার সন্ধি কিভাবে গঠিত হয় ইত্যাদি সবগুলোই আমরা এখানে উল্লেখ করলাম।
তাহলে আমাদের আর সন্ধি সম্পর্কে তেমন কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। তাহলে চলুন দেখা যাক সন্ধি কাকে বলে?
সন্ধি: পাশাপাশি অবস্থিত দুটো ধ্বনির মিলনের ফলে যদি এক ধনের সৃষ্টি হয় তবে তাকে সন্ধি বলে।।