বিশ্বের সকল মানুষ কোন না কোন রাষ্ট্রে বসবাস করে। অর্থাৎ সকল মানুষই প্রায় কোন না কোন দেশের নাগরিক। তাই রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের এই পৃথিবীতে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় 200 টি রাষ্ট্র আছে। এবং প্রতিটি রাষ্ট্রেই আছে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং জনসংখ্যা। আবার এই রাষ্ট্রগুলির পরিচালনার জন্যও রয়েছে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের সরকার। মূলত এগুলো ছাড়া কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না বা রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এখন এই রাষ্ট্রগুলি কবে থেকে উৎপত্তি সেই কথা বলা অত্যন্ত কঠিন। তাই রাষ্ট্র কখন কিভাবে উৎপত্তি লাভ করেছে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন হলেও কিছু কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা অতীত ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কতগুলো মতবাদ প্রদান করেছেন।
এই মতবাদ গুলি থেকে দেখা যায় বা বোঝা যায় যে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। মনীষীদের দেওয়া মতবাদ গুলি হল- ঐশী মতবাদ, বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ, সামাজিক চুক্তি মতবাদ এবং ঐতিহাসিক বা বিবর্তন মূলক মতবাদ। প্রথমে তাহলে দেখা যাক ঐশী মতবাদ সম্পর্কে,
ঐশী মতবাদ: এই মতবাদটি সবচেয়ে পুরাতন মতবাদ। এই মতবাদ থেকে দেখা যায় যে বিধাতা বা স্রষ্টা স্বয়ং রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন এবং রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি শাসক প্রেরণ করেছেন। শাসক তার প্রতিনিধি এবং তিনি তার কাজের জন্য একমাত্র স্রষ্টা বা বিধাতার নিকট দায়ী জনগণের নিকট নয়।
বল বা শক্তি প্রয়োগ মতবাদ: এই মতবাদ থেকে দেখা যায় রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে শক্তির জোরে রাষ্ট্র ঠিক আছে। এই মতবাদে বলা হয় সমাজের বড়শালী ব্যক্তিরা যুদ্ধবিগ্রহ বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বলের ওপর নিজেদের আধিপত্য স্থাপনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে এবং রাষ্ট্র শাসন করে।
সামাজিক চুক্তি মতবাদ: এই মতবাদের মূল কথা হলো সমাজে বসবাসকারী জনগণ পারস্পরিক যুক্তির ফলে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। ব্রিটিশ রাষ্ট্র দার্শনিক টমাস হব ও জনলোক এবং ফরাসি দার্শনিক রুশো সামাজিক চুক্তি মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন।
ঐতিহাসিক বা বিবর্তন মূলক মতবাদ: এই মতবাদের মূল বক্তব্য হলো রাষ্ট্র কোন একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। তবে এ কথা বলা যায় যে অতি প্রাচীনকাল থেকেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ প্রাচীন গ্রিসে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রগুলি গড়ে ওঠে নগরকেন্দ্রিক ভাবে। সে সকল ছোট ছোট নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্রগুলি পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে বৃহৎ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রের চারটি উপাদান রয়েছে। এই উপাদান গুলি হল জনসমষ্টি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড সরকার এবং সার্বভৌমত্ব। এবং একটি রাষ্ট্র টিকে থাকার জন্য এই চারটি উপাদান অপরিহার্য। এই চারটি উপাদানের একটি কেউ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায় না। যেমন জনসমষ্টি বাদ দিয়ে বাকি তিনটি উপাদান যদি থাকে তাহলে রাষ্ট্রের কোন অস্তিত্বই থাকে না। আবার রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব না থাকলেও সেখানে রাষ্ট্রকে কল্পনা করা অসম্ভব। এভাবে একটি রাষ্ট্র গঠন হওয়ার জন্য এর চারটি উপাদানই অপরিহার্য বলে বিভাজ্য হয়। কোন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সরকার।
সরকার ছাড়া কোন রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। তাই সরকারকে ছাড়াও কোন রাষ্ট্র কল্পনা করা ঠিক হবে না। তাই আমরা রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এখানে উপস্থাপন করলাম। রাষ্ট্র সম্পর্কিত সকল ধারণা গুলি অবশ্যই আমরা আমাদের এই পোস্ট থেকে পেয়ে গেলাম। তাহলে এখন দেখা যাক রাষ্ট্র কাকে বলে?
রাষ্ট্র: রাষ্ট্র বলতে এমন একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেখানে অনেকগুলি প্রতিষ্ঠান থাকবে অনেক জনগণ থাকবে সেই জনগণ গুলি একটি আইন বা নিয়মকানুন কাঠামো দ্বারা পরিচালিত হবে। এবং নির্দিষ্ট ভূ কাঠামো গুলির মধ্যে সকল নিয়মকানুন আইনের মধ্যে দিয়ে সেই ভূখণ্ডের সকল প্রতিষ্ঠানগুলি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করবে এই কর্তৃপক্ষ। তবে এ কথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া বা না পাওয়া বহুলামসে নির্ভর করে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির স্বীকৃতির ওপর।