পর্যায় সারণি কাকে বলে

মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পদার্থ এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে যে সকল ধারণা অর্জন করেছিল পর্যায় সারণী হচ্ছে তার একটি সম্মিলিত রূপ। পর্যায় সারণী মূলত একটি ছক বা টেবিল। এই টেবিলে যেমন শাড়ি এবং কলাম থাকে পর্যায় সারণিত তেমনি শাড়ি বা কলাম আছে একই ধরনের। পর্যায় সারণির বাম থেকে ডান পর্যন্ত বিস্তৃত শাড়িগুলোকে পর্যায়ে এবং খাড়া কলাম গুলোকে আমরা গ্রুপ বলে বা শ্রেণি বলে থাকি। আধুনিক পর্যায় সারণি বর্গাকার ঘর গুলোতে মোট ১১৮ টি মৌল আছে। পর্যায় সারণীতে কোন একজন বিজ্ঞানীর একদিনের পরিশ্রমের ফলে তৈরি হয়নি এ কথা আমরা ভালোভাবেই বুঝতে পারি না কারণ রসায়ন এক দিনেই এতদূর এসেছে বলে কারোই মনে হয় না। প্রাচীনকালেই রসায়নের আবিষ্কার বা আবিষ্কার হোক না হোক রসায়নের মধ্যে দেই আমাদের চলতে হয় সব সময়ই। আমরা সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন দাঁত ব্রাশ করি টুথপেস্ট দিয়ে এটি আসলে রসায়নের বিক্রিয়ার ফলেই হয়ে থাকে।

আবার সারাদিনের কাজকর্ম এবং বিভিন্ন খাবার দাবার যাই করি কেন না আমরা রসায়নের বিভিন্ন বিক্রিয়ার ফলেই সেই কাজগুলো হয় বা খাবার দাবার তৈরি হয়ে থাকে। তাই এ কথা আমরা বলে যেতে পারি যে রসায়নের মধ্যেই আমরা সারাদিনাতিপাত করে থাকি। সেটা জেনে বুঝেই হোক আর না জেনেই হোক সব সময় আমরা রসায়নের মাধ্যমে কাজ করে থাকি অর্থাৎ যে কাজগুলি করি সেগুলা রসায়নের বিক্রিয়া সমূহ হয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে কোন একজন বিজ্ঞানী বর্তমান আধুনিক পর্যায় সারণির তৈরি করেছেন একথা কখনোই কোনভাবেই আমরা ভাবতে পারবো না। ১৭৮৯ সালে বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, মার্কারি, জিংক এবং সালফার ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ সমূহ ধাতু ও অধাতু এই দুই ভাগে ভাগ করতে শুরু করেছিলেন। তাই বলা যায় বিজ্ঞানি ল্যাভয়সিয়ের সময় থেকেই মৌল গুলিকে কোন একটা ভাগে শ্রেণীবিভাগ করার কাজ শুরু হয়েছিল।

এরপর আবার দেখা যায় ১৮২৯ সালে বিজ্ঞানী ডোবেরাইনার লক্ষ্য করেন তিনটি করে মৌলিক পদার্থ একই রকমের ধর্ম প্রদর্শন করে। তিনি প্রথমে পারমাণবিক ভর অনুসারে তিনটি করে মৌল সাজান। এরপর তিনি আবার লক্ষ্য করেন যে দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম এবং তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যোগফলের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি তাই বিজ্ঞানী ডোবেরাইনারের এই সূত্রটি কে ত্রয়ী সূত্র বলে জানা যায়। এরপর 1864 সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলসমূহের জন্য নিউল্যান্ড অষ্টক সূত্র নামে একটি নতুন সূত্র প্রদান করেন।

এই সূত্র অনুযায়ী মৌলসমূহকে তিনি পারমাণবিক ভরের ছোট থেকে বড় অনুযায়ী সাজানোর চেষ্টা করেন। ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ সকল মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করে একটি পর্যায় সূত্র প্রদান করেন। এই সূত্রটি হলো “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলী তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়” । মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণির আরেকটি সাফল্য হচ্ছে কিছু মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারা। সে সময় মাত্র ৬৩টি মৌল আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে পর্যায় সারণির কিছু ঘর ফাঁকা রাখতে হয় তাকে।

তার এই ফাঁকা ঘর গুলোর জন্য যে মৌলের ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন পরবর্তীতে সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। আজকে আমাদের দেখাতে হবে পর্যায় সারণী কি বা পর্যায় সারণী কাকে বলে। আমরা পর্যায় সারণির সম্পর্কে অনেক কথা ভাগ্যড়ার ইতিহাস সকল কিছুই বললাম তাহলে এখন দেখা যাক পর্যায় সারণি কাকে বলে।
পর্যায় সারণি : তাহলে আমরা বলতে পারি একই ধর্মবিশিষ্ট মৌল সমূহ কে একই শ্রেণীভুক্ত ও বিভিন্ন ধর্মের মৌল সমূহ কে বিভিন্ন কলামে স্থান দিয়ে লেখা বা আবিষ্কৃত ১১৮টি মৌল সমূহকে সাজিয়ে যে টেবিল বা ছক তৈরি করা হয়েছে সেই ছককে বা টেবিল কে পর্যায় সারণি বা ইংরেজিতে Periodic Table বলে। পর্যায় সারণী আবিষ্কার করার ফলে আমাদের এই রসায়ন বিজ্ঞান টি অনেক আধুনিক হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের মতামত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *