ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে কারক হল √কৃ+ অংক (ণক)। কারক শব্দের অর্থ যা ক্রিয়া সম্পাদন করে। একটি বাক্যে ক্রিয়া পদের গুরুত্বই সবচাইতে বেশি। বাক্যে ক্রিয়া পদের সাথে অন্যান্য পদের সম্পর্ক থাকে। যেমন- হাসান বই পড়ে। এখানে পরে পথটি একটি ক্রিয়াপদ। হাসান পড়ে বাক্যটিতে পরে এর সঙ্গে অপর পথ হাসান এই বিশেষ্য পদে একটি সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কে নামি কারক। পিয়ার সাথে যে পদের কোন অন্যায় থাকে তাকে কারক বলে এই কথাটি বলেছেন বা এই সংজ্ঞাটি দিয়েছেন ডঃ মোঃ শহিদুল্লাহ। আবার ডক্টর শনিতে কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন যে- বাক্যে ক্রিয়া পদের সাথে নাম পদের যেমন বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের কিংবা বিশেষ্যের অর্থে ব্যবহৃত কোন পদের যে সাক্ষাৎ সম্বন্ধ থাকে তাকেই কারক বলা হয়। আবার ডক্টর সুকুমার সেন বলেন বাক্যে ক্লিয়ার সাথে যে পদ অন্বিত বা সংশ্লিষ্ট থাকে তাকে কারক বলে।
কারক নির্ণয় করতে হলে আমাদেরকে কিছু জিনিস বা বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে যেমন বাক্যের ক্রিয়া পদকে সাধারণত
কে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। কি বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্মকারক। কি বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই কর্মকারক। আবার কাকে সত্য ত্যাগ করে প্রদান করা বুঝায় অর্থাৎ কাকে দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই সম্প্রদান কারক বলা যায়। কোথা থেকে বা কোথা হতে প্রশ্ন করলে যদি উত্তর পাওয়া যায় তাকে অপাদান কারক বলা হয়। আবার কোথায় কখন দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই অধিকরণ কারক। বাংলা ব্যাকরনের নিয়ম অনুসারে যদি কোন নির্দিষ্ট কারকের জন্য নির্দিষ্ট কোন বিভক্তি নেই। যেকোনো কারকে যেকোন বিভক্তি হতে পারে।
কাজেই বিভক্তির চিহ্ন দেখে কারক নির্ণয় করা ঠিক নয়। পদের অর্থ ও সংগাথ ধরে কারক নির্ণয় করা উচিত। আবার বাক্য স্থিত বা বাক্যের অন্তর্ভুক্ত একটি শব্দের সঙ্গে অন্য আরেকটি শব্দের সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য শব্দের সঙ্গে যেসব বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যুক্ত হয় তাদের বিভক্তি বলে। যেমন- বাগানে বসে মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এই বাক্যটিতে বাগানে মা শিশুকে চাঁদ ইত্যাদি পদে বিভিন্ন বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ বাক্যটিতে বাগান শব্দের সাথে এ বিভক্তি এবং শিশু শব্দের সাথে কে বা দ্বিতীয় বিভক্তি যুক্ত হয়েছে।
বিভক্তি গুলো ক্রিয়া পদের সঙ্গে নাম পদের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। শব্দ বা নাম পদের সাথে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে শব্দ বিভক্তি বা নাম বিভক্তি বলা হয়। বিভক্তি সম্বন্ধে প্রকাশের কাজ করে। বিভক্তি ছাড়া বাংলা ভাষায় কোন বাক্য রচনা করা সম্ভব হয় না। শব্দের সাথে বিভক্তি যুক্ত হলেই কেবল তা বাক্যে ব্যবহার করা যায়। বিভক্তিযোগে বাক্যের সকল শব্দের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলেই তা পদে রূপান্তরিত হয়। আর বিভক্তিযুক্ত শব্দই হচ্ছে পদ। তাই বাক্য গঠনের জন্য শব্দের সাথে বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা এখানে কারক ও বিভক্তির সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য দেখে নিলাম।
তাই কারক ও বিভক্তি সম্পর্কে আপনাদের মনে আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ রইল না। এখন কোন বাক্যে কোনটা বিভক্তি কোনটা কারক এটা যদি বলা হয় আপনারা অবশ্যই তা নির্ণয় করতে পারবেন। তারপরেও দেখা যাক যে কারো কাকে বলে?
কারক: কারক শব্দটির অর্থ যা ক্রিয়াপদ সম্পাদন করে। বাক্য স্থিত ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে। কারো প্রধানত ছাই প্রকার। যথা: কততিকারক কর্মকারক করণ কারক সম্প্রদান কারক অপাদান কারক অধিকরণ কারক। একটি বাক্যে ছয়টি কারকের উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে। মহারানী হেমন্তকুমারী প্রতিদিন ভাড়ার থেকে নিজ হাতে গরিবদের টাকা দিতেন। এই বাক্যটিতে ছয়টি কারকে রয়েছে।