বচন কাকে বলে

সাধারণত বচন শব্দের অর্থ কথা বা উক্তি। আবার বচন হলো সংখ্যার ধারণা। বাচন ব্যাকরণ এর একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ সংখ্যার ধারণাকে বুঝায়। অর্থাৎ কোন কিছু এক না একাধিক বচন সে ধারণা প্রকাশ করে। শব্দের চেয়ে রূপের তারা তার সংখ্যা বোঝায় তাকে বচন বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে পদের দ্বারা কোন ব্যক্তি প্রাণী বা বস্তুর সংখ্যা নির্দেশিত হয় তাকেই বচন বলে। ব্যাকরণে বচন মূলত বিশেষ্য এবং সর্বনাম পদের এক বা একাধিক সংখ্যার ধারণা নির্দেশ করে। সে কারণে শুধু বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বচন আছে অন্যান্য পদের কোন বচন নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে পাখিটি আকাশে উড়ছে। এই বাক্যে পাখিটির তিন নির্দিষ্ট একটি পাখিকে বোঝাচ্ছে। পাখিগুলো আকাশে উড়ছে। এই বাক্যে পাখিগুলোর গুলো বহুত্ব বাচক অর্থাৎ অনেকগুলো পাখিকে বোঝাচ্ছে।

বিশেষ্য: একটির ধারণা- ফুল ছেলে বই ইত্যাদি।
একাধিকের ধারণা: ফুলগুলো ছেলেরা অনেক বই ইত্যাদি।
সর্বনাম: একটি ধারণা-আমি, তুমি, সে ইত্যাদি।
একাধিকের ধারণা: আমরা, তোমরা, তারা ইত্যাদি।
বচনের প্রামাণ্য সংজ্ঞার্থ:

শব্দের যে রূপের দ্বারা সেই সবচেয়ে যাহা বোঝায় তাহার সংখ্যা নির্দেশ করা হয় তাকেই বচন বলে এটি বলেছেন ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। আবার
শব্দের যে রূপের দ্বারা তার সংখ্যা বোধ হয় তাকে বচন বলে এটি বলেছেন জ্যোতিভূষণ চাকী।
বাক্য স্থিত কোন পথ যা কোন ব্যক্তি প্রাণী বস্তু প্রভৃতিকে বোঝাচ্ছে তার সংখ্যা এক না তার থেকে বেশি এই খবরটি জানানোর ব্যাপারটি হলো বচন। বচনের এই সংজ্ঞা প্রদান করেছেন অশোক মুখোপাধ্যায়।
তাহলে আমরা বচনের বিভিন্ন ব্যাকরণবিদের সংজ্ঞা এখানে দেখে নিলাম। বচনের প্রকারভেদ সম্পর্কে এখন দেখি। বাংলা ভাষায় বচন দুই প্রকার যথা একবচন ও বহুবচন।

একবচন: যে শব্দ তারা কোন ব্যক্তি প্রাণী বা বস্তুর একটি মাত্র সংখ্যার ধারণা প্রকাশ করা হয় তাকে একবচন বলে। যেমন- পাখিটি বইটি কলমটি লোকটি মেয়েটি ছেলেটি ইত্যাদি দ্বারা একবচন বোঝায়। আরো উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখাতে পারি বা বলতে পারি যে-
কলমটি খুঁজে পাচ্ছি না। তোয়ালে খানা কোথায় রাখলে? শিক্ষক ছাত্রকে পড়াচ্ছেন। ইত্যাদি শব্দগুলি দিয়ে একবচন বোঝায়।

বহুবচন: যে শব্দ দ্বারা একের অধিক সংখ্যক ব্যক্তি প্রাণী বা বস্তুর ধারণা পাওয়া যায় তাকে বহুবচন বলে। যেমন উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় যে- পাখিরা, বইগুলো, কলমগুলো, লোকেরা, মেয়েরা, ছেলেরা, ইত্যাদি সব বহুবচনের উদাহরণ।
আরো উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়- আমরা নদীর ধারে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ছেলেরা মাঠে খেলছে। শিক্ষকেরা জ্ঞান দান করেন। রাখাল গরুর পাল নিয়ে যায় মাঠে।

এই সকল বাক্য গুলির সবই বহুবাচনের উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়। বচন ভেদে কেবলমাত্র বিশেষ্য এবং সর্বনাম শব্দের বচনভেদ হয়ে থাকে। কোন কোন সময় টা ঠিকানাখানি ইত্যাদি যোগ করে বিশেষ্যের এক বচন নির্দেশ করা হয়। যেমন- গরুটা বাছুরটা কলমটা খাতাখানা বইখানা ইত্যাদি। বাংলায় বহুবচন প্রকাশের জন্য রা, এরা, গুলা,গুলি, গুলো, দিক, দের ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয় এবং সব, সকল, সমুদয়, কুলবৃন্দ, বর্গ, নিচয, রাজি, রাশি, পাল, দাম, নিকর , মালা, আবলি, ইত্যাদি সমষ্টিবোধক শব্দ ব্যবহৃত হয়। সমষ্টি বোধক শব্দ গুলোর বেশির ভাগই তৎসমভা সংস্কৃত ভাষা থেকে আগত। বাংলা ভাষায় বা বাংলা ব্যাকরণে একবচন প্রকাশের জন্য কৃতকৃত প্রত্যয় বা বিভক্তি নেই শব্দের মূল রূপটি একবচন নির্দেশ করে। এবং ব্যাকরণে আমাদের অবশ্যই একবচন থেকে বহুবচন এবং বহুবচন থেকে একবচন ইত্যাদিতে রূপান্তর করতে হয়।

আমরা বচন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সামনে এতক্ষণে তুলে ধরলাম। তাহলে বচনের সকল জিনিস আপনারা দেখে নিলেন এবং এখান থেকে একবচন এবং বহুবচনের সকল কিছু আপনারা রূপান্তর করতে পারবেন। এবং এতক্ষণে আপনারা বচন সম্পর্কিত সকল ধারনাগুলি পেয়ে গেলেন। তাই এ ধরনের সকল তথ্য পেতে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন আশা রাখি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *