আমরা আগেই জেনেছি যে গ্রীক শব্দ জ্যা ও মিতি নিয়ে গঠিত হয়েছে জ্যামিতি শব্দটি। এখানে জ্যা অর্থ ভূমি আর মিতি অর্থ পরিমাপ বোঝায়। অতএব জ্যামিতি শব্দের আভিধানিক অর্থ আমরা বলতে পারি ভূমির পরিমাপ। অর্থাৎ গণিতবিদ্যার যে শাখায় ভূমি বা স্থানের পরিমাপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় তাকে জ্যামিতি বলে। জ্যামিতিকে আবার স্থানভিত্তিক বিজ্ঞান ও বলা যেতে পারে। অধ্যাপক গ্রিক পন্ডিত ইউক্লিড যিনি মিশরের আলেক জাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেছেন জ্যামিতির পরিমাপ পদ্ধতির সংজ্ঞা ও প্রক্রিয়া সমূহ ধারাবাহিকভাবে ১৩ টি খন্ডে এলিমেন্টস পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে এই পুস্তককেই আধুনিক জ্যামিতির ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়।
সর্বপ্রথম মিশরেই জ্যামিতির আলোচনা শুরু হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদগণ তাদের ইতিহাস ঘেঁটে একথা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। জ্যামিতির শুরু হয় বিন্দু দিয়ে। বিন্দু থেকে রেখার উৎপন্ন হয়ে থাকে। রেখা আমরা জানি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি সরলরেখা অপরটি বক্ররেখা। সরলরেখা আবার দুই ধরনের হতে পারে বা হয়ে থাকে যার একটি সমান্তরাল সরলরেখা অপরটির তির্যক বাঁকা সরলরেখা। তির্যক সরলরেখাকে আবার তিন ভাগে বিভক্ত করা যায় যা কোন ত্রিভুজ এবং চতুর্ভূজ হতে পারে। বক্ররেখা থেকে বৃত্তের উৎপন্ন হয়ে থাকে বা বৃত্তকে বক্ররেখার শরবতকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখাতে পারি।
তির্যক সরলরেখা দিয়ে যে কোন উৎপন্ন হয় সেই কোনগুলি আবার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যথা কোণ ভেদে ত্রিভুজ গুলি হল সুখ খোকন সমকোণ স্থূলকোণ সরল কোণ প্রবৃদ্ধ কোণ সম্পূরক কোণ বিপ্রতীপ কোন সন্নিহিত কোণ ইত্যাদি। আবার বাহুভেদের যে ত্রিভুজগুলি হয় সেগুলি হল সমবাহু সমদ্বিবাহু বিষমবাহ। কোন ভেদে ত্রিভুজ গুলি হল সূক্ষ্মকোণী স্থূলকোণী, সমকোণী ত্রিভুজ। চতুর্ভুজ হিসেবে আমরা বলতে পারি রম্বস আয়তক্ষেত্র সামান্তরিক ট্রাপিজিয়াম বর্গ ইত্যাদিকে। জ্যামিতিতে লক্ষ বস্তু থেকে লক্ষ্যবস্তুর দূরত্বের তুলনায় ব্যাসার্ধ অতিক্ষুদ্র হলে ওই অবস্থানকে বিন্দু বলা হয়। যেসব বিন্দু একই সরলরেখায় অবস্থান করে তাদেরকে আবার সমরেখা বিন্দু বলা হয়।
একটি রেখার কোন বিন্দু ও উহার একপাশের অংশকে একত্রে রশ্মি বলা হয়ে থাকে এবং ওই রশ্মি বিন্দু টিকে রশ্মির প্রান্ত বিন্দু বলা হয়। দুই বা ততোধিক সরলরেখার একটি সাধারণ বিন্দু থাকলে তবে উক্ত সরলরেখাগুলোকে ওই বিন্দুর সমবিন্দু বলা হয়ে থাকে। আবার বিন্দুর চলার পথকে রেখা বলে, রেখার দৈর্ঘ্য আছে কিন্তু প্রস্থ ও বেদ নেই এর কোন প্রান্তবিন্দু থাকে না। কোন রেখা দুইটি বিন্দু দ্বারা সীমাবদ্ধ অংশকে ওই বিন্দু দুইটির সংযোগ রেখাংশ বলা হয়। সাধারণত একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছাতে যদি কোন প্রকার দিকের পরিবর্তন না হয় তবে তাকে সরলরেখা বলে। এবং একটি বিন্দু থেকে অন্য একটি বিন্দুতে পৌঁছতে যদি দিক পরিবর্তন হয় তবে তাকে বক্ররেখা বলা হয়। যদি দুইটি রশ্মি পরস্পরের সাথে মিলিত হলে মিলিত বিন্দুতে উৎপন্ন জ্যামিতিক আকার কে কোন বলা হয়।
তিন বাহু দ্বারা সীমাবদ্ধ সমতল ক্ষেত্র কে ত্রিভুজ বলা হয়ে থাকে। এবং চারবাকু দ্বারা সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রকে চতুর্ভুজ বলা হয়। ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি আমরা জানি 180 ডিগ্রি সমকোণ। ত্রিভুজের দুই বাহুর সমষ্টি উহার তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর হয়ে থাকে। আবার ত্রিভুজের ভূমির বিপরীত দিকের বিন্দুর নাম শীর্ষবিন্দু হয়। এবং ত্রিভুজের যেকোনো এক বাহুকে বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয় তার অন্তস্থ বিপরীত কোণ দ্বয়ের সমষ্টির সমান হয়ে থাকে। আমরা জ্যামিতির বিভিন্ন তথ্য-পাত্র আপনাদের সামনে উপস্থিত করলাম এখন আপনারা জ্যামিতিতে লম্ব কাকে বলে সেটি এখন দেখে নিতে পারেন। চলুন তাহলে দেখা যাক লম্ব কাকে বলে?
লম্ব: একটি সরলরেখা, অপর একটি সরলরেখার ওপর দন্ডায়মান হলে তাদের উৎপন্ন সন্নিহিত কোণের মান ৯০° হলে প্রথমোক্ত রেখাকে দ্বিতীয় রেখাটির ওপর লম্ব বলা হয়।