মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ মহান আল্লাহর আদেশ নিষেধ পরিহার করে চলাকে সাধারণ ভাষায় ইবাদত বলা হয়ে থাকে। তেমনি ভাবে নবী ও রাসূলের দেখানো পথ অনুযায়ী একে অপরের সাথে উত্তম আচার ব্যবহার করাও ইবাদতের এই অংশ বলে মনে করা হয়। মূলত ইবাদতের মাধ্যমেই মহান আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্ব প্রকাশ করা হয়। মানুষ যেহেতু আল্লাহর বান্দা তাই আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা মানুষের আদর্শ কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির করেছে একটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। এই সম্পর্কে আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন জিন ও মানব জাতিকে আমি আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাই আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহতালার সন্তুষ্টি লাভ করা।
আর এ কারণেই ইবাদত একনিষ্ঠ আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ তা কবুল করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে। আল্লাহতালার সৃষ্টি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য প্রাণীরা শুধু প্রাণী তাদের বিবেক এবং বুদ্ধি জ্ঞান নেই এ কারণে প্রাণীরা শুধু প্রাণীই। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীদের থেকে মানুষ তাদের বিবেক বুদ্ধি ও জ্ঞানের জন্য অনেকটা শ্রেষ্ঠ। যদি মানুষ সে বিবেক বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে শেষ চতুষ্পদ জন্তু কিংবা তার চেয়েও অধম হয়ে যায়।
আল্লাহতালা বলেন যে তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দ্বারা তারা উপলব্ধি করতে পারে না তাদের চক্ষু আছে কিন্তু তা দ্বারা দেখেনা তাদের কর্ণ আছে তা দ্বারা তারা শোনে না এরা পশুরই ন্যায়। আল্লাহর খলিফা হিসেবে সকল কার্য আল্লাহর বিধান মত করাই হলো ইবাদত। সালাত আদায় করার পর তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়বে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে ব্যাপৃতভাবে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও।
এ আয়াতের মর্ম থেকে বোঝা যায় যে আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য চাকরি এবং কৃষি কাজ করা এবং বৈধ পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও দুনিয়ার অন্যান্য সকল ভাল কাজ করা হলো ইবাদত। এমনিভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ভালোবাসা তার রহমতের আশা শাস্তির ভয়, ইখলাস খবর শোকর তাওওয়াক করুন ইত্যাদি সব কাজে ইবাদতের মধ্যে পড়ে। ইবাদতকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল হাক্কুল্লাহ ও অপরটি হাক্কুল ইবাদ।
হাক্কুল্লাহ: আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত অধিকার বা কর্তব্য কে হাতকল্লাহু বলে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য অনেক ধরনের ইবাদত করি। সেগুলোর মধ্যে কিছু ইবাদত শুধু আল্লাহতালার জন্য নির্দিষ্ট এগুলো হলো আক্কুল্লাহ।
পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহতালার জ্ঞানের আওতাভুক্ত। তার হাতে সকল সৃষ্টির রিজিক। আমরা তারই ইবাদত করি।
হাক্কুল ইবাদ: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষকে বসবাস করতে হয়। পিতা মাতা ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে মানুষ সামাজিকভাবে একসাথে বসবাস করে। একজনের দুঃখে অন্যজন সাড়া দেয়। আপদে-বিপদে একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে। পরস্পরের প্রতি এই সহানুভূতি ও দায়িত্বই আক্কল ইবাদ। কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে ইসলামে বান্দার হক তথা মানবাধিকারের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা ইবাদত সম্পর্কে অনেক কিছুই এখানে আলোচনা করলাম। ইবাদতের আদ্য-পাঞ্জ্য আপনাদের জানানো হলো। ইবাদত কি সে সম্পর্কে কোরআন হাদিসে কি ধরনের কথা বলা হয়েছে সব কথায় আপনাদের এখানে উল্লেখ করা হলো। তাই আপনারা ইবাদত সম্পর্কিত অনেক তথ্যই জেনে নিলেন।
তাহলে আসুন দেখা যাক ইবাদত কি কাকে বলে?
ইবাদত: ইবাদত হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হল চূড়ান্তভাবে দীনতা হীনতা ও বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া।আর ইসলামী পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজকর্মে আল্লাহতালার বিধি-বিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়।