ব্যাকরণ ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ধ্বনি শব্দ বাক্য ইত্যাদি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাষার মধ্যেকার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করা ব্যাকরণের কাজ। ব্যাকরণ গ্রন্থে এসব বৈশিষ্ট্যকে সূত্রের আকারে সাজানো হয়ে থাকে। ব্যাকরণ এর মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে থেকে বলা যায় ধ্বনি শব্দ বাক্য, ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ,বাক্যতত্ত্ব, অর্থতত্ত্ব ইত্যাদি সব ভাষা হল বাক্যের সমষ্টি। বাক্য গঠিত হয় শব্দ দিয়ে। আবার শব্দ তৈরি হয় ধ্বনি দিয়ে। এদিক থেকে ভাষার ক্ষুদ্রতম উপাদান হলো ধ্বনি। এই ধ্বনি শব্দ বাক্য প্রত্যেকটি অংশই ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। এছাড়া শব্দের ও বাক্যের বহু ধরনের অর্থ হয়। সেসব অর্থনীয় ব্যাকরণে আলোচনা করা হয়।
ব্যাকরণের এসব আলোচ্য বিষয় বিভক্ত হয় অন্তত চারটি ভাগে। আবার বলা যায় ব্যাকরণ ভাষা বিজ্ঞানের একটি মৌলিক অনুষঙ্গ। ভাষাকে বর্ণনা করে বা বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা থেকেই ব্যাকরণের জন্ম হয়। ব্যাকরণ ভাষাকে শুদ্ধ রূপে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। যে কোন ভাষাকে শুদ্ধরূপে জানতে বা লিখতে হলে সেই ভাষার অভ্যন্তরীণ নিয়ম-শৃঙ্খলা এর উৎপত্তি বিকাশ পরিবর্তন বিবর্তন সহ গঠন প্রকৃতি স্বরূপ ও প্রয়োগ বিধী সম্পর্কে সম্যখ জ্ঞান থাকা আমাদের আবশ্যক। তাই ভাষাকে বিশ্লেষণ পূর্বক এর অন্তর্নিহিত বিধি-বিধান জানার জন্য ব্যাকরণের সৃষ্টি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। শাব্দিকভাবে ব্যাকরণ শব্দটি সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ। ভাষার শৃঙ্খলাবোধ ও সৌন্দর্য রক্ষার প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছে ব্যকরণ ব্যাকরণের প্রয়োজনে ভাষা সৃষ্টি হয়নি। যেমন করে পথিকের জন্য পথ সৃষ্টি হয়েছে পথের জন্য পথিক নয়। কাজেই ভালো ব্যাকরণ জানলেই কেউ ভালোবাসা শিল্পী হবে সে আশা করা যায় না।
তবে ভাষার বিভিন্ন রীতি ও বিধি জানা থাকলে ভাষা শুদ্ধ রূপে লিখতে পড়তে ও বলতে পারা যায়। ব্যাকরণ ভাষার বিশ্লেষণ ও শৃঙ্খলা বিধান করলেও ব্যাকরণী ভাষা শেখার একমাত্র বিধি-নির্দেশক পুস্তক নয়। কারণ এক্ষেত্রে ভাষা আগে শিখতে হবে ব্যাকরণ পরে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বয়স হাজার বছর হলেও বাংলা ব্যাকরণের বয়স মাত্র আড়াইশো বছর।ভাষা সৃষ্টি হওয়ার পর এর নিয়ম-কানুনকে শ্রেণীবদ্ধ করে বিশ্লেষণের প্রয়োজনে ব্যাকরণের উৎপত্তি হয়েছে। ভাষার একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে ব্যাকরনের মাধ্যমে এর সর্ব প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা হয়। ভাষা কখন কিরূপ হওয়া উচিত ব্যাকরণ তার নির্দেশ না দিয়ে বরং ভাষার মধ্যে কি আছে তা পর্যালোচনা করে। অন্য কথায় ব্যাকরণ ভাষার কোন ব্যবস্থাপত্র নির্দেশ করে না বরং যে নিয়মে বা যেভাবে ভাষা ব্যবহার হওয়ার উচিত সেই নিয়মটি শুধু বলে দেয়।
ব্যাকরনের এ বৈশিষ্ট্য অনুসারে বলা যায়, ব্যাকরণ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না বরং ভাষায় ব্যাকরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ভাষাকে যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে ব্যাকরণের নিয়ম কানুন প্রণীত হয়েছে। সে কারণে যার যেমন খুশি তেমনভাবে ভাষা ব্যবহার করতে পারেনা। সকলকে অবশ্যই ব্যাকরণের নিয়ম কানুন মানতে হয়। তবে ভাষার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহের পরিণতিতে নিয়ম-কানুনের যেসব পরিবর্তন ঘটে তা ব্যাকরণকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হয়। ভাসা নদীর গতিশীল জলধারার মতো নিত্য প্রবাহমান। এই প্রবাহমানতাই ভাষার প্রাণ। মুখে মুখে ভাষা ব্যবহার ব্যবহারে যে পরিবর্তন ঘটে তাতে অনেক সময় নতুন নিয়মের সৃষ্টি হয়।
সে নিয়মকালক্রমে ব্যাকরণের আওতাভুক্ত হয়ে পড়ে। বাংলা ভাষার উৎপত্তির সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত ভাষার গতিপথ পর্যালোচনা করলে সহজেই মনে হবে যে ধনী শব্দ ও রূপতত্ত্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সব সময় একটিমাত্র রূপ বিদ্যমান থাকেনি। প্রাচীন বা মধ্যযুগের বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম কানুন থেকে আধুনিক বাংলা ভাষাভাষীর বহু দূরে সরে এসেছে এবং আধুনিক যুগের বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য সাম্প্রতিক ব্যাকরণের উপজীব্য হয়েছে। তাহলে চলুন দেখি, ব্যাকরণ কাকে বলে
ব্যাকরণ: যে পুস্তক পাঠ করলে ভাষা শুদ্ধ রূপে লিখতে বলতে ও পড়তে পারা যায় তাকে ব্যাকরণ বলা হয়। আর যে পুস্তক পাঠ করলে বাংলা ভাষা শুদ্ধ রূপে লিখতে পড়তে ও বলতে পারা যায় তাকে বাংলা ব্যাকরণ বলা হয়ে থাকে