বর্তমানে আইসোটোপ ব্যবহার করে অনেক কিছুই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তাই আইসোটোপ কি এটা আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে। আইসোটোপগুলি চিকিৎসা ক্ষেত্রে, কৃষি ক্ষেত্রে, শক্তির অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিছু কিছু আইসোটোপ রয়েছে যাদের নিউক্লিয়াস স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেঙ্গে অর্থাৎ নিজে নিজেই ভেঙ্গে আলফা রশ্মি, গামা রশ্মি, বিটা রশ্মি ইত্যাদি নির্গত করে তাদেরকে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ বলে। আইসোটোপ গুলি বিভিন্ন প্রেক্ষিতে ব্যবহারের ফলে বর্তমান পৃথিবীতে অনেক উপকৃত হচ্ছে সকল ক্ষেত্রেই। তাই আজ আমাদের এই আইসোটোপ সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে।
প্রথমে দেখে চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিভাবে আইসোটোপ ব্যবহৃত হচ্ছে। আইসোটোপ ব্যবহার করে রোগাক্রান্ত স্থানের ছবি তোলা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ টেকনিশিয়াম 99 তে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এই আইসোটোপ যখন শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে জমা হয় তখন ওই তেজস্ক্রিয় আইসোটোপামা রশ্মি বিকিরণ করে তখন বাইরে থেকে গামা রশ্মি সনাক্তকরণ ক্যামেরা দিয়ে সেই স্থানের ছবি তোলা সম্ভব হয়। এই তেজস্ক্রিয় আইসোটোটেকনিশিয়াম 99 এর লাইফটাইম ৬ ঘন্টা।
রোগ নিরাময়েও আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। সর্বপ্রথম থাইরয়েড ক্যান্সার নিরাময়ে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়েছিল। এবং সেখানে রেজাল্ট ভালো হওয়ায় পরবর্তীতেও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। প্রথমে রোগীকে পরিমাণ মতো তেজস্ক্রিয় আয়োডিন আইসোটপ(131) দ্রবণ পান করানো হয়।
এই আইসোটোপ থাইরয়েড পৌঁছায়। এই আইসোটোপ থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হয় এবং থাইরয়েডের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়া ইরিডিয়াম আইসোটোপ ব্রেন ক্যান্সার নিরাময় ব্যবহার করা হয়। টিউমারের উপস্থিতি নির্ণয় ও নিরাময়ের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ সিক্সটি কভার ব্যবহার করা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে যেভাবে বা যে কারণে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয় তা এখন আমরা দেখব। ফসলের পুষ্টিতে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ ফসলের পুষ্টির জন্য জমিতে পরিমাণমতো সার ব্যবহার করতে হয়। সার মূল্যবান বস্তু। তাই অতিরিক্ত ব্যবহার করা আর্থিক ক্ষতির কারণ।
একদিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সার পরিবেশের ক্ষতির কারণ অপরদিকে প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণ সার ব্যবহার করা হলে ফসলের উৎপাদন কম হয়। তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহার করে জমিতে কি পরিমাণ নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস আছে তা জানা যায়। উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন ও তেজস্ক্রিয় ফসফরাস মূলের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং তা উদ্ভিদের শরীরের বিভিন্ন অংশে শুষিত হয়। এ সকল তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়। জায়গার মুলার কাউন্টার ব্যবহার করে এই তেজস্ক্রিয় রশি শনাক্ত ও পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
ক্ষতিকারক পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা হয় আইসোটোপের মাধ্যমেই। ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় সবসময়ই মারাত্মক হুমকিস্বরূপ তাই এগুলো যেমন ফসলের উৎপাদন কমায় তেমনি এদের মাধ্যমে রোগ প্রতিপন্ন উদ্ভিদে প্রবেশ করে। এ সকল পোকামাকড় ধ্বংস করার জন্য ফসলে এবং জমিতে কীটনাশক দিতে হয়। এই কীটনাশক পরিবেশ ও আমাদের শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। শুধু ক্ষতিকর তাই নয় এই কীটনাশক ক্ষতিকারক পোকামাকড়ের সাথে সাথে অনেক উপকার করে ধ্বংস করে ফেলে।
তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ সমৃদ্ধ কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয়েছে সর্বনিম্ন কতটুকু পরিমাণ কীটনাশক একটি ফসলের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে আইসোটোপ ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু পরমাণুকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুতে পরিণত করলে অর্থাৎ ভীষণ বিক্রিয়া ঘটালে প্রচুর পরিমাণে তাপশক্তি বের হয়। এই তাপ শক্তি ব্যবহার করে জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। আমরা সেটিকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলে থাকি আমাদের দেশে রূপপুরে এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তাহলে এখন আমরা দেখতে পারি এই আইসোটোপ আসলে কাকে বলে।
আইসোটোপ: যে সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ও নিউটন সংখ্যা ভিন্ন তাদেরকে একে অপরের আইসোটোপ বলে। আইসোটোপ কিছুভাবে প্রকৃতিতে থাকে বাকিগুলি ল্যাবরেটরীতে বানানো সম্ভব হয় বা প্রস্তুত করা যায়। এই আইসোটপ আবিষ্কার রসায়ন বিজ্ঞানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।