প্রত্যয় কাকে বলে

শব্দ বা ধাতুর মৌলি হচ্ছে প্রকৃতি। এটি শব্দের অবিভাজ্য মৌলিক অংশ। অর্থাৎ মৌলিক শব্দের যে অংশকে কোনভাবে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকেই প্রকৃতি বলে। প্রকৃতি কথাটি বোঝানোর জন্য প্রকৃতির আগে ধাতুর চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এ প্রকৃতি চিহ্নটি ব্যবহার করলে প্রকৃতি শব্দটি লেখার প্রয়োজন হয় না। শব্দ বা পথ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি অপসারণ করলে প্রকৃতির অংশ পাওয়া যায়। প্রকৃতি দুই প্রকারের হয় একটি নাম প্রকৃতি ও অপরটি ক্রিয়া প্রকৃতি।
নাম প্রকৃতি: নাম পদের মূল অংশকে বলে নাম প্রকৃতি। যেমন ছেলেরা (ছেলে + রা) শব্দের মূল অংশ “ছেলে” একটি নাম। তাই একে নাম প্রকৃতি বলা যায়। আর রা হলো বিভক্তি।

ক্রিয়া প্রকৃতি: ক্রিয়া পদের মূল অংশকে বলে ক্রিয়া প্রকৃতি। যেমন- চলা (চল+আ ) শব্দের মূল অংশ চল হলো ক্রিয়া প্রকৃতি আর আ হলো প্রত্যয়।

যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন- √খেল+অনা=খেলনা। এখানে√খেল ধাতুর সাথে অনাপত্তায় যুক্ত হয়ে খেলনা গঠিত হয়েছে। এখন দেখা যাক প্রত্যয়ের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত বিষয়গুলি।
প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ-

প্রত্যয়ের সহায়তায় যেসব শব্দ গঠিত হয় তার উৎস দুরকম। কখনো ধাতু আবার কখনো নাম শব্দের শেষে প্রত্যয় যোগে নতুন শব্দ গঠিত হয়। এদিক থেকে প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার। যেমন : ১় কৃৎ প্রত্যয় ও ২় তদ্ধিত প্রত্যয়।
১. কৃৎপ্রত্যয় : ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে বলে কৃৎপ্রত্যয়। যেমন– চলন্ত, জমা ও লিখিত শব্দের যথাক্রমে অন্ত, আ ও ইত কৃৎপ্রত্যয়।
২. তদ্ধিত প্রত্যয় : শব্দমূল বা নাম শব্দের সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন– হাতল, ফুলেল ও মুখর শব্দের যথাক্রমে ল, এল ও র তদ্ধিত প্রত্যয়।

বাংলা ভাষা শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যয়ের ভূমিকা অপরিসীম। এতে কখনো ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে শব্দ গঠন করে আবার কখনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন তৈরি করে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় √বাজ্+অনা =বাজনা, এবং কাম + আর= কামার। এখানে বাজ ধাতুর সঙ্গে অনাপত্তায় যুক্ত হয়ে বাজনা এবং কাম শব্দের সাথে আর প্রত্যয় যুক্ত হয়ে কামার শব্দ গঠিত হয়েছে। ধাতু স্বরূপে ব্যবহৃত হতে পারে না। এর সাথে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যখন নতুন শব্দ গঠিত হয় তখন তা কথাবার্তায় প্রয়োগ হয়ে থাকে। এছাড়া প্রত্যয়ের সাহায্যে নতুন নতুন শব্দ গঠিত হয়ে বাংলা ভাষার উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি সাধিত হয়। এ থেকে অনুধাবন করা যায় বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে প্রত্যয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

এখন আমরা প্রত্যয় নির্ণয়ের বিভিন্ন কৌশল বা সহজ কৌশল সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে পারি। আমরা জানি প্রত্যয় হল নতুন শব্দ গঠনের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি। প্রত্যয়ের সাহায্যে যেসব শব্দ গঠিত হয় তার উৎস দু ধরনের। একটি ধাতু এবং অপরটি শব্দ। অর্থাৎ প্রত্যয় গঠিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে মূল অংশ হিসেবে কখনো ধাতু আবার কখনো শব্দ পাওয়া যাবে। বিষয়টিকে আমরা যদি দেখাতে পারি তাহলে দেখানো যায় যে। ধাতু অথবা শব্দ+প্রত্যয়=প্রত্যয় গঠিত নতুন শব্দ। প্রত্যয় সম্পর্কিত মনে রাখতে হবে যে তত্ত্বের প্রদত্ত শব্দ দ্বারা কাজ বোঝাবে। কারণ কী তথ্য এর শব্দটি গঠিত হয় ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে আর ধাতু হলো ক্রিয়ার মূল।

ক্রিয়া দ্বারা কোন কাজ করা কে বোঝায়। আবার কৃতিত্বের শব্দটিকে যখন বিশ্লেষণ করা হয় তখন প্রকৃতিতে অবশ্যই ধাতু হবে এবং ধাতুর সঙ্গে ধাতু চিহ্ন থাকবে। ধাতু অর্থ যুক্ত হবে কিন্তু ভাষায় এদের স্বাধীন ব্যবহার থাকবে না। এভাবে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সহজেই আমরা কৃত প্রত্যয় কে চিহ্নিত করতে পারি। এ ধরনের সকল তথ্য পেতে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *