বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল গ্যাস পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি আসলে জীবাশ্ম জ্বালানি। তবে এগুলোকে কেন জীবাশ্ম জ্বালানি বলা হচ্ছে সে দিক এখন আমরা আলোচনা করে দেখব। বিভিন্ন উদ্ভিদ অথবা প্রাণী থেকে এই জ্বালানি গুলি উৎপন্ন হয়েছে তাই এদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে আমরা জানি। হাজার হাজার বছর পূর্বে কোন বন জঙ্গল অথবা লোকালয়ে আগ্নেয়গিরির আগ্নেয়ৎপাতের ফলে উদগিরণ এর ফুটন্ত লাভা সে সকল উদ্ভিদ প্রাণীর উপর পড়ার ফলে মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। পরবর্তীতে সেই লাভার নিচে চাপা পড়া জীবজগৎ অনেক চাপ এবং তাপে জমাট বেঁধে জীবাশ্ম জ্বালানির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ হাজার বছর ধরে সেসব উদ্ভিদ প্রাণী অর্থাৎ জীব গুলি মাটির নিচে উচ্চ চাপ এবং তাপে তেল, গ্যাস, খনিজ কয়লা ইত্যাদি উৎপন্ন হয়ে থাকে। তাই এদেরকে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানি বলে থাকি। জীবাশ্ম জ্বালানি এর একটি সীমা রয়েছে।
তাই পৃথিবীতে যত জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ তেল গ্যাস ইত্যাদি মজুদ রয়েছে এগুলি এক সময় ফুরিয়ে যাবে। এবং বিজ্ঞানীরা সেটা ভেবে দেখেছেন বা বিভিন্ন হিসাব করে দেখেছেন যে পৃথিবীতে যত রকমের তেল,গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, কয়লা ইত্যাদি মজুত আছে তা দিয়ে পৃথিবীর মানুষ আগামী 40 বছর পর্যন্ত চলতে পারবে। তাই বলা যায় যে আগামী ৪০ বছর পর অবশ্যই পৃথিবী আবার সেই পূর্বের ন্যায় অর্থাৎ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করার পূর্বের অবস্থায় চলে যাবে কিনা।যদি বিকল্প কিছু আমরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার না করি এবং এই তেল গ্যাস পেট্রোলিয়াম কয়লা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে থাকি তাহলে আগামী 40 বছর পর অবশ্যই সেসব জ্বালানি ফুরিয়ে যাবে এবং পৃথিবী আগের মতো হয়ে যাবে। তাই বর্তমান যুগে বিজ্ঞানীরা সৌর বিদ্যুৎ, সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যতটা সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে নিরলস ভাবে। বর্তমানে এলকোহল অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে তৈরি জ্বালানি যেমন অ্যালকোহল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে।
কোন কোন দেশে পেট্রোলিয়াম ডিজেল অকটেন এর সঙ্গে ২৫ পার্সেন্ট হারে অ্যালকোহল মিশিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে যাতে কিছুদিন হলেও এই জীবাশ্ম জ্বালানি গুলি আরো বেশি দিন ধরে জ্বালাতে পারা যায়। তাই আমাদের অত্যন্ত সচেষ্ট থাকতে হবে এই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করার দিকে। খেয়াল রেখে চলতে হবে যাতে অল্প করে হলেও জ্বালানি বাঁচানো সম্ভব হয়। তাহলে আমরা দেখতে পেলাম যে শত শত মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় ছিল যখন পৃথিবী জুড়ে ছিল শুধুমাত্র ঘন বন জঙ্গল নিচু জলাশয় আর সমুদ্র যেখানে ছিল জলজ উদ্ভিদ ফ্লাইটোপ্লাংটন তাদের থেকেই উৎপন্ন হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ অর্থাৎ পেট্রোলিয়াম প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদির খনি রয়েছে। যেমন বাংলাদেশের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে পেট্রোলিয়ামও পাওয়া গেছে। এই জীবাশ্ম জ্বালানির মূল উৎস জীব দেহ তাই এই সকল জ্বালানির মূল উপাদান কার্বন এবং কার্বনের যৌগ। জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে সবচাইতে বেশি প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেল বা প্রাকৃতিক পেট্রোলিয়াম জাতীয় তেল এবং তারপরেই প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ কয়লা এবং সমানভাবে প্রয়োজনীয় আমাদের বর্তমান পৃথিবীর সভ্যতা বজায় রাখার জন্য।
এখন আমাদের দেখাতে হবে জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে? এবার চলুন তাহলে দেখা যাক প্রাকৃতিক গ্যাস কি বা জীবাশ্ম জ্বালানি কি।
জীবাশ্ম জ্বালানি: বহু প্রাচীনকালের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মৃতদেহের যে ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পাওয়া যায় তাকে জীবাশ্ম বলে। শত শত মিলিয়ন বছর আগের প্রাণী এবং উদ্ভিদের ধ্বংসাবশেষ জীবাশ্ম রূপে পাওয়া গেছে। কয়লা প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম যেগুলো আমরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি সেগুলো জীবাশ্মের উপর মাটির নিচ থেকে পাওয়া যায়। তাই কয়লা প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম কে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে থাকে। এই জীবাশ্ম জ্বালানি গুলি আমাদের মানব সভ্যতার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।