সামাজিক অসমতা বলতে বোঝার সমাজের মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ বা অচেনা বৈষম্য। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় সমাজের মানুষের মধ্যে বৈষম্যকেই অসমতা বলা হয়ে থাকে। সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন অর্থ সামাজিক ও অবস্থার ভিত্তিতে সমাজে বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য ভেদ করাই হলো সামাজিক অসমতা এর মধ্যে পড়ে। অপরদিকে সমাজের বিভিন্ন ধরনের ক্লাসিফিকেশন এর কারণে বা ক্লাসিফিকেশন করে যে স্তর বিন্যাস করা হয় বা সাজানো হয় সেটিকেই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলা হয়ে থাকে।
মূলত সামাজিক স্তরবিন্যাস দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি সামাজিক স্তরবিন্যাসে সামাজিক ও প্রাকৃতিক দুই ধরনের উপাদান থাকলেও স্তরবিন্যাস মূলত সামাজিক কারণেই সৃষ্ট। সামাজিক এবং অপরটি প্রাকৃতিক। তবে প্রাকৃতিক কোন উপাদান ততক্ষণ পর্যন্ত স্তরবিন্যাসের উপাদান হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ সামাজিকভাবে স্তরবিন্যাস না করে থাকে। অর্থাৎ সমাজের মূল্যবোধ এবং ধ্যান ধারণার ওপর যতক্ষণ প্রভাব বিস্তার করতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাকৃতিক স্তরবিন্যাস হয় না। যেমন বলা যেতে পারে আমরা সমাজে নারীর চেয়ে পুরুষের প্রভাব বেশি অথবা কালোর চেয়ে ফর্সা বা সুন্দর এর প্রভাব বেশি এইভাবে স্তর বিন্যাস করা হয়। তাই স্তর বিন্যাস আসলে মানব সৃষ্ট মানুষেরাই এই ধরনের স্তরবিন্যাস করে থাকে এবং প্রভাবিত করে থাকে।
তাই বলা যায় প্রাকৃতিক কোন স্তরবিন্যাস হয় না সবই আসলে সামাজিকভাবেই স্তরবিন্যাস করে থাকি এবং এটি মানুষের দ্বারাই বা সমাজের দ্বারাই সৃষ্ট স্তরবিন্যাস। মানুষ মূলত বিভিন্ন জৈবিক এবং অজৈবিক উপাদানের উপর ভিত্তি করেই সামাজিক স্তরবিন্যাস করে থাকে। সামাজিক স্তরবিন্যাসের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন ধরনের মতামত উপস্থাপন করেন তাদের বক্তব্যে। সমাজতন্ত্রের জনক কাল মার্কস বলেছেন সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে সমাজের মানুষের বিভাজন। এ বিভাজ ন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে তার মধ্যে একটি হল অর্থনৈতিক অবস্থা। অর্থাৎ সামাজিক স্তরবিন্যাসে অবশ্যই দেখা যায় যে অর্থনৈতিক অবস্থা শিক্ষা প্রতিপত্তি ক্ষমতা লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদি করা হয়ে থাকে।
এ সকল শিক্ষা প্রতিপত্তি ক্ষমতা পেশা লিঙ্গ এর উপর ভিত্তি করে সমাজে বিদ্যমান জনসংখ্যা কে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা হয়। জন্মসূত্রে সকল মানুষ সমান এমন মতবাদ চালু থাকলেও আসলে ক্ষমতাবানরা এ ধরনের স্তরবিন্যাস করে থাকে। অর্থাৎ পৃথিবীতে অবস্থিত সকল সমাজেই এই ধরনের সামাজিক বৈষম্য বা বৈষম্যকৃত স্তরবিন্যাস করা হয়ে থাকে পৃথিবীতে এমন কোন সমাজ নেই যে সমাজে এধরনের স্তরবিন্যাস নেই। সে কারণেই বলা হয়ে থাকে সব যুগেই সবকালেই সব মানুষের মধ্যেই বা সব সমাজেই এ ধরনের স্তরায়িত করা হয় এবং এই তারাই তো করা হয় অবশ্যই মানুষের সামাজিক ভাবে ক্ষমতা বা অন্যান্য বিষয়গুলির ওপর দৃষ্টি রেখেই প্রবাহিত হয়ে থাকে পৃথিবীর সকল সমাজেই। স্তরবিন্যাস শব্দটি মূলত ইংরেজি শব্দ stratification যা মৃত্তিকা বিজ্ঞান থেকে পাওয়া।
সমাজ বিজ্ঞানী মালভিন টিউমিন এর মতে সামাজিক স্তরবিন্যাস হচ্ছে এমন একটি সামাজিক গোষ্ঠী বা সমাজ শক্তি সম্পত্তি সামাজিক মূল্য ও মানসিক দুষ্টের তারতম্যের ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ হওয়া মানুষকে বুঝায়। তাই সামাজিক বৈষম্যতা এবং স্তরবিন্যাস পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে আছে ছিল এবং হয়তো ভবিষ্যতেও থেকে যাবে। তবে সামাজিকভাবে এটি যদি না থাকে তাহলে যেকোনো সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তাই আমরা চাই না সামাজিক ক্লাসিফিকেশন সামাজিক স্তরবিন্যাস বা সামাজিক বৈষম্যতা। সকল ধরনের বৈষম্য দূর হোক সমাজ হোক সুস্থ সুন্দর সকলের জন্য বসবাসযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের এই লিখায় আমরা সামাজিক বৈষম্য এবং স্তরবিন্যাসের সকল শাখা প্রশাখা উপসাকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো তাহলে পাঠকগণ অবশ্যই বেছে নিতে পারল যে সামাজিক বৈষম্য এবং সামাজিক স্তরবিন্যাস কি। মূলত সামাজিক বৈষম্য এবং স্তরবিন্যাস প্রায় একই ধরনের কার্যক্রম এটি মানুষের বিভিন্ন আকার ইঙ্গিতে বৈষম্য ে কথাবার্তায় ফুটে ওঠে যা কারো জন্য কাম্য হতে পারে না।