রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার সাথে সংসদীয় শাসিত সরকার ব্যবস্থার পার্থক্য

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা মূলত একদলীয় শাসনব্যবস্থা। অর্থাৎ এখানে রাষ্ট্রপতি প্রাদেশিক হয় সর্বময় ক্ষমতা। অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির আদেশ বা বিধি নিষেধই দেশের সকল নাগরিকের মেনে চলা একান্ত কর্তব্য। রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থায় একক নির্বাহী শাসন ব্যবস্থা। যেখানে সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাহী শাখায় নেতৃত্ব দেন বা আইনসভা বা বিধানসভা বা সংসদ সভা থেকে আলাদা থাকে। এই ব্যবস্থায় সরকারের প্রধান বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ও প্রধান হয়ে থাকে যাকে আমরা রাষ্ট্রপতি বলে বিবেচনা করে থাকি। এই শাসনব্যবস্থায় নির্বাহীগণ নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং এর জন্য আইন পরিষদ দায়ী থাকেন না এবং আইন পরিষদ চাইলেও সে বিষয়ের কোন রদবদল করতে পারেন না। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এটার রক বদল করা হয় তা অভিশংসনের মাধ্যমে।

তবে এই অভিশংসনের মাধ্যমে পরিবর্তিত করা বা রদবদল করা খুবই কম ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থায় প্রেসিডেন্টই হয়ে থাকেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অর্থাৎ তিনি দেশের জন্য বা দেশের ভালোর জন্য যেকোনো ধরনের কাজ যদি তিনি ভাল মনে করেন তাহলে তিনি সেটি করতে পারবেন এর জন্য তিনি অবশ্যই আইনসভার নিকট দায়ী থাকবেন না। এ ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট তখনই এর কার্যকারিতা লাভ করে যখন ওই পদাতিক কারী ব্যক্তি বেক্তিগতভাবে কোন গভর্নিং বডির সভাপতি তো করেন। এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা থেকে নির্বাহী ব্যবস্থা পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মহাদেশীয় কংগ্রেসের সভাপতি এর কার্যাবলী। তবে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থায় যদি কোন দেশের সরকার ক্ষমতায় থাকে তবে একচেটিয়া ভাবে সকল দেশের একই পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি শাসিত বা শাসন জারি আছে এমন নয় এর বিভিন্ন ধরনের ভাগও রয়েছে।

অর্থাৎ সংসদীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রের প্রধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন। অপরদিকে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রকারান্তরে জনগণের শাসন ব্যবস্থা চালু থাকে। অর্থাৎ এই প্রকার শাসন ব্যবস্থায় তৃণমূল থেকে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধি সংসদে পাঠানো হয়। তিনি তার রাজনৈতিক দলের নেতা নির্বাচিত করে থাকেন। সংসদীয় দলের রাজনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে যিনি নেতা নির্বাচিত হন তিনি সরকারের প্রধান দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অর্থাৎ সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত নেতাই হচ্ছে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এই পদ্ধতিতে যেহেতু জনগণের নেতা নির্বাচন করার ক্ষমতা রয়েছে তাই এই শাসনব্যবস্থাকে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় বলে বিবেচনা করা হয়। এই সরকার ব্যবস্থায় যিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তাকে প্রধানমন্ত্রী বলা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলেও তিনি জনগণের দ্বারা প্রতিনিধির দ্বারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এজন্য বলা হয় এটি জনগণের শাসন অর্থাৎ গণতন্ত্র। বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরনের প্রধানমন্ত্রী শাসিত বা সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার রয়েছে।

এ ধরনের শাসনব্যবস্থা পৃথিবীর যে যে রাষ্ট্রে রয়েছে তাদের মধ্যে যুক্তরাজ্য ভারত বাংলাদেশ সহ আরো বেশ কিছু দেশে বর্তমানে এই শাসনব্যবস্থা রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে এই সংসদীয় গণতন্ত্র পদ্ধতির সরকারি পৃথিবীতে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এখানে শুধু একজনার ক্ষমতায় দেশ পরিচালিত হয় না। অর্থাৎ সমস্ত সংসদ সদস্যগণ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতামতের ভিত্তিতে দেশের জন্য যে জিনিস প্রয়োজন বা ভালো হয় বা সুফল বয়ে আনবে সে ধরনের বিল পাস করা হয়। তাই আমরা এতক্ষণে আমাদের এই পোস্টে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দুই ধরনের সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম যাতে এখান থেকে আপনারা অবশ্যই সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পার্থক্যগুলি বুঝে নিতে পারেন। আমরা অবশ্যই আশা রাখি যে এখন এই দুই সরকার ব্যবস্থার আলোচনা করার প্রেক্ষিতে পার্থক্যগুলি করা আমাদের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *