মৌজা ও গ্রামের মধ্যে পার্থক্য | গ্রাম ও মৌজার মধ্যে পার্থক্য কী

মৌজা হচ্ছে সরকারিভাবে রাজস্ব আদায়ের সর্বনিম্ন একক এলাকা। এটি জমি জমার মাপ চোখের ক্ষেত্রে বা হিসাব নিকাশের ক্ষেত্রে বা এলাকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে করা হয়েছে। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের জন্য বা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে মৌজা শব্দটি ব্যাপকভাবে শুনতে পাওয়া যায় ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা উপজেলা তহশীলদারে। অর্থাৎ মৌজা শব্দটি সম্পূর্ণরূপে সরকারি প্রশাসনিক এলাকা অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের জন্য যে ছোট ছোট গ্রাম ভিত্তিক এলাকা গঠন করা হয়েছে সেগুলিকেই মৌজা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে মুঘল আমলে কোন পরগনা বা রাজস্ব জেলার রাজস্ব আদায়ের একক হিসাবে এটি বহুল ভাবে প্রচলিত ছিল। বিংশ শতাব্দীতে মৌজা শব্দটি ব্যবহৃত হয় গ্রামের বিপরীতে একক হিসাবে। এবং সেই সময়ে এই মৌজা শব্দটি আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

তৎকালীন সময়ে ৫৬ টি মৌজা নিয়ে গঠিত হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলি জেলার চন্ডীতলা ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক। অর্থাৎ এ কথা বলা যায় যে উনবিংশ শতাব্দীর এবং তারও পূর্বে মৌজা সামাজিক ও রাজস্ব উভয়েরই একক হিসাবে ব্যাপকভাবে চিহ্নিত হতো। এমন অনেক ধরনের মজাই ছিল যেখানে কোন বসতভিটা বা বসতবাড়ি ছিল না বা কয়েকটি সামান্য বসত ভিটা থাকতে পারে। মজা ছিল এলাকা চিহ্নিতকরণের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একক। একটি মৌজার অন্তর্গত নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূমিতে ছিল গ্রামীণ বসতি বা স্থাপনা। স্থানীয় অবস্থা থেকে বসতবাড়ি গুলো ছিল কোথাও কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবার কোথাও কোথাও একিস্থিত হয়ে। একসাথে থাকা স্থানগুলিকে সামগ্রিকভাবে গ্রাম বলে চিহ্নিত করা হতো।

এই গ্রাম কে কোথাও কোথাও আবার পল্লীগ্রাম হিসেবেও পরিচিত লাভ করেছিল। তাই বাংলাদেশের জরিপ বিভাগের মতামত অনুযায়ী তারা বিভিন্ন গ্রাম এবং মৌজাটা শব্দ দুইটি আলাদা আলাদা ভাবে বা স্বতন্ত্র রূপে প্রতিমান হত। বর্তমানেও বাংলাদেশের জরিপ বিভাগের কাছে মৌজা শব্দটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এবং তাদের প্রশাসনিক কাজগুলি বা জরিব গুলি মৌজা হিসেবে করা হয়ে থাকে। এ কারণেই সাধারণ মানুষজনের কাছে বউ যাওয়া ততটা পরিচিতি লাভ না করলেও যাদের জমি জমা আছে বা জমি-জামার হিসাব সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত তারা মৌজার হিসাবটি খুব ভালোভাবে জানে। এবং কোন জমি কোন এলাকাটি কোন মৌজার অন্তর্গত সেটি তারা খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে। তারা মজার হিসেবে চিহ্নিতকরণ এলাকা দেখিয়ে দিতে পারে কোনটি কোন মৌজার অন্তর্গত এলাকা বা অঞ্চল। রাজস্ব নির্ধারণ এবং রাজস্ব আদায়ের ইউনিট গুলি এখনো মৌজা হিসেবেই তাদের রাজস্ব আদায় করে থাকে। তাদের হিসাব নিকাশগুলি গ্রাম হিসেবে নয় মৌজার একক হিসেবেই করে থাকে।

আবার গ্রাম অর্থাৎ ক্ষুদ্র অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত প্রায় এক একটি গ্রামকে নিয়ে বা দুই একটি গ্রামকে নিয়ে একটি করে ওয়ার্ড গঠিত হয়েছে এবং একটি ইউনিয়নে মোট ৯টি ওয়ার্ড হয়ে থাকে। তাহলে বলা যায় যে একটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় প্রায় 15 থেকে 18 বা 20 21 টি গ্রাম নিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষুদ্র একক ওয়ার্ড হলেও একে গ্রাম হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে। তাই শাসনের ক্ষুদ্রতম একক বা অঞ্চলকে গ্রাম হিসেবে বলা যেতে পারে। তাই গ্রাম এবং মৌজা ২ টি স্বতন্ত্র ভাবে দুইটি বা দুই বিভাগের স্বতন্ত্র অঞ্চলের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই গ্রাম এবং মৌজা দুইটি আলাদা আলাদা বা ভিন্ন ভিন্ন একক হিসেবে আমাদের সামনে প্রতিয়মান হয়।

এতক্ষণে আমরা গ্রাম এবং মৌজার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য গুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এবং চেষ্টা করলাম গ্রাম এবং মৌজার পার্থক্য নিরূপণ করার। তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাদের এই পোস্টটি পড়ে গ্রাম এবং মৌজার পার্থক্য বুঝে নিলেন আশা করি। এ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *