সাধারণত আমরা আইন বলতে বুঝি কোন বিধি-বিধানকে। সেই বিধি-বিধান হতে পারে কোন ধর্মীয় বিধি-বিধান সামাজিক বিধি-বিধান অথবা রাষ্ট্রীয় বিধি-বিধান হতে পারে। এবং এই বিধি বিধানগুলি অবশ্যই সকলকে মেনে চলতে হয়। এই কাঠামো গত বিধি-বিধান গুলি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়ম-নীতিমালা যখন সকলের জন্য মেনে চলার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তখন তাকে আইন বলা যেতে পারে। তাই একজন নাগরিকের যে কোন রাষ্ট্রের বা যে দেশের নাগরিক সেই দেশের সমস্ত আইন বা নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। প্রতিটি রাষ্ট্রের বাদেশেরই আলাদা আলাদা ভাবে নিয়ম কানুন বা আইন হয়ে থাকে। সেই আইন বা নিয়ম কানুন গুলো প্রত্যেক নাগরিকের জন্যই মেনে চলা অবশ্য কর্তব্য। তাই বলা যেতে পারে একজন নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্র কর্তৃক একটা সুনির্দিষ্ট বাধা ধরা নিয়ম-কানুনই হচ্ছে আইন।
বিভিন্ন ধরনের আইন হয়ে থাকে। সামগ্রিকভাবে আইন বহু ভাগে বিভক্ত। আমাদের বাংলাদেশের আইনের সংখ্যা হচ্ছে ১১২২টি। তবে এর মধ্যে ব্রিটিশদের করা আইনের সংখ্যা ২৪৩ টি এবং পাকিস্তানের করা আইনের সংখ্যা ১৫৭ টি বাকি বাংলাদেশের করা আইন 722 টি। এছাড়াও অনেক ধর্মীয় আইন রয়েছে আমাদের দেশে। বিভিন্ন ধর্মীয় আইন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আইনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগ গুলো যথাক্রমে সরকারি আইন বেসরকারি আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে পরিচিত। সরকারি আইন কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ফৌজদারি আইন প্রশাসনিক আইন এবং সাংবিধানিক আইন।
আবার কোন রাষ্ট্রের জরুরি কোন প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি নিজের একক ক্ষমতা বলে যে আইন তৈরি করে বা রাষ্ট্রের প্রয়োজনের রাষ্ট্রপতির মুখনিঃসৃত বাণী হচ্ছে অধ্যাদেশ আইন। তাই দেখা যায় যে রাষ্ট্রের যখন কোন আইনের প্রয়োজন পড়ে এবং তখন কোন সংসদ অধিবেশনে না থাকে তাহলে রাষ্ট্রপতির নিজের বা কোনো রাষ্ট্র রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা অর্পণ করেছে সেই ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যে আইন বা বিধি তৈরি করে সেটি হচ্ছে অধ্যাদেশ নামে পরিচিত। আবার অপরদিকে তাকালে দেখা যায় যে আইন হচ্ছে সংসদে সংসদ সদস্যদের কর্তৃক তৈরিকিত বিধি-নিষেধ। সংসদ অধিবেশনে বিল আকারে প্রস্তাবিত কোন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সংসদের সকল সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বা ভোটে পাসকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে পাসকৃত প্রস্তাবগুলিই হচ্ছে আইন। তাই আইন এবং অধ্যাদেশের মধ্যে বিস্ত র পার্থক্য না থাকলেও আইন হচ্ছে সমষ্টিগত বিধি-নিষেধ বা সকলের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনার ফসল আইন।
আর অধ্যাদেশ হচ্ছে কোন একক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত বা বিধি-নিষেধ। আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান মতে বা সংবিধানের 93 অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে গেলে অথবা অধিবেশন না থাকলে যে কোন জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারি করতে হয়। তবে রাষ্ট্রপতিকে এই অধ্যাদেশ জারি করার ক্ষমতা সাংবিধানিকভাবে দেওয়া রয়েছে। তাহলে এখন আমরা দেখতে পারি আইন এবং অধ্যাদেশের মধ্যে পার্থক্য গুলি।
আইন ও অধ্যাদেশের মধ্যে পার্থক্য: আইন হচ্ছে সংসদ সদস্যদের দ্বারা কোন প্রস্তাবকৃত বিলের আলোচনা সাপেক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠদের সদস্যদের দ্বারা তৈরি কোন বিধি, আর অপরদিকে অধ্যাদেশ হলো রাষ্ট্রপতি তার নিজের ক্ষমতা বলে একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তৈরি কৃত কোন বিধি।
তাই আমরা দেখতে পাই যে আইন এবং অধ্যাদেশের মধ্যে সামান্য কিছু পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে এছাড়া মূলত আইন এবং অধ্যাদেশ রাষ্ট্রের নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারাই তৈরি হয়ে থাকে। আইনে ভুল ত্রুটি কম থাকলেও অধ্যাদেশ একটু বেশি থাকতে পারে কারণ অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির একক ক্ষমতা বলে একক সিদ্ধান্তে একটি নিয়ম আইনরূপে জারি হয়। আর আইন হচ্ছে সকলের দ্বারা সকলের বিবেচনা প্রসূত সকলের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি বিধি এই কারণে আইনে ভুল ত্রুটি কম থাকতে পারে বলে সবাই বিবেচনা করে থাকে। তাহলে আমাদের এই পোস্টটিতে আইন এবং অধ্যাদেশ সম্পর্কিত সকল তথ্য প্রকাশ করা হলো।