বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা বঙ্গভঙ্গের পটভূমি। বাংলার ইতিহাসে মনে রাখার মত একটি বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনা। ব্রিটিশ শাসিত বাংলাকে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার কথা বলে ভাগ করা হলেও এর পেছনে ছিল সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য । মূলত হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে ব্রিটিশ বিরোধী ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার এক ষড়ষন্ত্র মূলক সিদ্ধান্ত ছিল এই বঙ্গভঙ্গ।
আপনারা অনেকেই বঙ্গভঙ্গ রদ কত সালে হয় এই প্রশ্নটির উত্তর জানার জন্য গুগল সহ ইন্টারনেটের নানান জায়গায় অনুসন্ধান করছেন। আপনারা এ প্রশ্নের উত্তরটি জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নির্বাচন করুন, আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কত সালে এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এ প্রশ্নের উত্তরটি জানতে হলে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কত সালে।
বাংলার হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকে বলা হলো ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ।সে সময় বঙ্গভঙ্গ রদে বাংলার হিন্দু জমিদার ও পুজিপতিরা যে আন্দোলন করেছিল, সেটা ছিল নিছকই বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন। তারা সত্যকে আড়াল করে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থবিরোধী হিংসাত্মক হিন্দুবাদী আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রাম সাজাতে চাচ্ছে। এই সাথে বঙ্গভঙ্গ সমর্থনকারী পূর্ববঙ্গের মানুষ এবং তাদের নেতাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম বিরোধী সাজিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের জেনে রাখাটা উচিত।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালি হিন্দুরা বঙ্গবঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় জানায় যে, বাংলা বিভক্ত হলে, সমগ্র বিহার ও উড়িষ্যা সহ একটি প্রদেশে তারা সংখ্যা লঘুতে পরিণত হবে। তারা এরুপ বিভাজনকে বাংলায় জাতীয়তাবাদকে শ্বাসরোধ করার একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করেছিল। অবশেষে, হিন্দুদের প্রবল আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হন এবং সেইসাথে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেন।ভারতী
উপ মহাদেশে শিক্ষার প্রসারের সাথে সাথে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে ধীরে ধীরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। তখন এসব আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা। এছাড়া ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের পেছনে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল।
দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে। এর ফলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। এই ঘটনা থেকে প্রচন্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় পূর্ববঙ্গ মুসলমানদের ধারণা হয় যে নতুন প্রদেশের ফলে শিক্ষা কর্মস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ বেড়ে যাবে। যদি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এ বিভক্তি মেনে নিতে পারছিল না তারপরে প্রচুর জাতীয়বাদের লেখা শুরু হয়। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ রোধ করার জন্য এক মর্ম স্পর্শী গান আমার সোনার বাংলা লিখে ফেলেন। যা অনেক পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ র জাতীয় সংগীত হিসেবে পরিচিত লাভ পায়। সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদের ফল ত্রুটিতে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ আবার একত্রিত হয়।
বঙ্গভঙ্গ রদের মূল কারণ ছিল হিন্দুদের বিরোধীতা, স্পষ্ট করে বলতে গেলে পশ্চিম বাংলার উঁচু শ্রেণীর হিন্দুদের বিরোধীতা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার কথা ভেবে হিন্দু রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ শিক্ষিত শ্রেণী বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করে। অথচ পূর্বের হিন্দুরা ঠিকই বঙ্গভঙ্গের পক্ষেই ছিল। তবে পরবর্তীতে পশ্চিমের উগ্রবাদী আন্দোলনের প্রভাব পূর্বেও পড়ে। সবচেয়ে বাজে অবস্থা হয় যখন বাংলাকে ভাগ করাকে কেন্দ্র করে উগ্র হিন্দুত্ববাদের জন্ম হয় ও হিন্দু জাতীয়তা বাদের প্রসারের চেষ্টায় মুসলমান দের সমর্থন হারায় কংগ্রেসসহ হিন্দু নেতারা।
বঙ্গ ভঙ্গকে কেন্দ্র করে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে বঙ্গভঙ্গ রদের পর মুসলিম লীগের নেতৃত্বে আসা নেতারা হিন্দুদের বিরোধীতার বদলে ঐক্যের চেষ্টা চালান। বঙ্গভঙ্গের ফলাফল ছিল সুদূর প্রসারী। যদিও বঙ্গভঙ্গের ফলাফল সাময়িক ছিল তবুও বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায় এর থেকে বেশী লাভবান হয়েছিল।
আপনারা যারা বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কত সালে এই প্রশ্নের উত্তরটি জানার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান করছেন আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে এসে আপনাদের কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তরটি জেনে নিন।